প্রতিদিন গড়ে ৭শ’র অধিক রোগীর রোগ নির্ণয় করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগে। যা করে থাকেন হাসপাতালটির মাত্র ৯ জন রেডিওগ্রাফার। অর্থাৎ একজন রেডিওগ্রাফার গড়ে প্রায় ৮০ জনের রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করছেন। অথচ স্বাস্থ্যসেবার মানদণ্ড অনুযায়ী একজন রেডিওগ্রাফার পাঁচ জনকে সেবা দেয়ার কথা। সে হিসাবে প্রায় ১৬ গুণ বেশি চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে চমেক হাসপাতালের একজন রেডিওগ্রাফারকে।
শুধু চমেক হাসপাতাল নয়। নগরীর আরেক সরকারি হাসপাতাল- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিত্রও প্রায় একই। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে রেডিওগ্রাফার মাত্র দু’জন। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর চিত্র আরও করুণ। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সের মাত্র ৫টিতে একজন করে রেডিওগ্রাফার আছেন। বাকিগুলোতে নেই। দু-একটিতে বেসরকারি সংস্থার নিয়োজিত একজন করে রেডিওগ্রাফার আছেন। কোথাও ক্থোাও রেডিওগ্রাফারের কাজ করছেন অন্য কর্মচারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগীর তুলনায় রেডিওগ্রাফার কম এবং কোথাও কোথাও রোগ নির্ণয়ের জন্য একজন রেডিওগ্রাফারও না থাকা এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ হওয়ার কারণে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভুল রিপোর্ট প্রদানের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। এ জন্য চাহিদা অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলোতে রেডিওগ্রাফার নিয়োগ দেওয়া খুবই জরুরি। রেডিওগ্রাফারদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্ট (বিএআরআইটি) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘অদেখা রোগকে আবিষ্কার করে থাকেন একজন রেডিওগ্রাফার। রোগ নির্ণয়ে রেডিওগ্রাফারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার রোগীর ক্ষেত্রেও নির্ভূল এবং সঠিক রিপোর্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একজন রেডিওগ্রাফারকে এত বেশি চাপ নিতে হয় যে- তার পক্ষে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।’
রেডিওগ্রাফারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগ নির্ণয়ের প্রতিটি মেশিন অপারেট বা পরিচালনা করার জন্য একজন করে রেডিওগ্রাফারের প্রয়োজন। এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবার মানদণ্ড অনুযায়ী পাঁচজন রোগীর বিপরীতে একজন রেডিওগ্রাফার থাকতে হবে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোতে তার চিত্র উল্টো। পর্যাপ্ত রেডিওগ্রাফার থাকলে রোগীরা যেমন স্বাচ্ছন্দে তাদের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন, তেমনি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও নির্ভুল তথ্য প্রদান করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু অতিরিক্ত চাপের কারণে তাড়াহুড়ো করেই রিপোর্ট প্রদান করতে হয়। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্ট (বিএআরআইটি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ রেডিওগ্রাফার থাকার কথা, কিন্তু সে পরিমাণ নেই। ২০০৮ সালের পর থেকেই নিয়োগ বন্ধ। রোগীর স্বার্থেই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।’
বিশ্ব রেডিওগ্রাফি দিবস আজ: এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব রেডিওগ্রাফি দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘পেশার মানোন্নয়ন/পেশার উন্নতি’। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও যথাযথভাবে উদযাপিত হবে দিবসটি। রেডিওগ্রাফি দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের সেমিনার হলে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন ল্যাব ও হাসপাতালের উদ্যোগেও দিবসটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব