চট্টগ্রাম রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্ণফুলী থেকে বালি উত্তোলন

কালুরঘাটে বেপরোয়া অবৈধ বালি-বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:০১ অপরাহ্ণ

সরকারের তালিকায় কর্ণফুলী নদীর বোয়ালখালীতে কোনো বালুমহাল নেই। তারপরও আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতার দাপটে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন বালুখেকোরা।
শুধু বোয়ালখালী নয়, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান অংশেও নদীর বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তৎকালীন মন্ত্রী-এমপিদের দাপট খাটিয়ে এ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল তাদের অনুসারীরা। যত্রতত্র-অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে তীব্র হয়েছে কর্ণফুলীর ভাঙন। শত শত কোটি টাকা খরচ করে ভাঙন ঠেকাতে হচ্ছে সরকারকে। তৎকালীন সরকারিদলের নেতারা অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িত থাকায় প্রশাসন অনেকটা নীবর ছিল।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যায় বালুখেকোরা। গোপনে নিরাপদে সরিয়ে নেয় বালু উত্তোলনের ভলগেট ও ড্রেজার। বালু বিক্রির জায়গাও হাতছাড়া হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের বালুখেকোরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন পর নিশ্বাস ফেলছে কর্ণফুলী। কিন্তু তাতে কী ! সব চাপ পড়েছে এখন কালুরঘাটে। কালুরঘাটে ভলগেট ও ড্রেজার দিনে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রেলের জায়গা দখল করে চলছে অবৈধ বালু বাণিজ্য।
সরেজমিন দেখা যায়, কালুরঘাট সেতুর উভয় তীরে গড়ে উঠা বালু বিক্রয়কেন্দ্র। নদীর ধার ও নদী সংলগ্ন খালের তীর দখল করে ড্রেজার ও নৌকা থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে নদী ও খালের তীর দখল করে বালু বাণিজ্য করে আসছে। সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকেও বালু উত্তোলন করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
কালুরঘাট সেতুর উভয় তীরে রেলওয়ের বিশাল ভূ-সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়াও সরকারি খাস জমিও রয়েছে সেতুর পূর্ব পাড়ে। সেতু দুই পাড়ের নদী ও খালের তীর দখল করে বালুবিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এ বলা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাবে না।
কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ের তিনজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা রেল ও সরকারের জায়গা দখল করে বালুবাণিজ্য করে আসছে। রেলওয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে রেলের ¯িøপার দিয়ে সেই বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দিলেও রহস্যজনক কারণে পুনরায় তা চালু করা হয়েছে। তারা বলেন, বালুখেকোদের বেশির ভাগ ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর বালুখেকোরা আত্মগোপনে চলে যায়। কিছুদিন বন্ধ ছিল বালু উত্তোলন ও বিক্রয়কেন্দ্রগুলো। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ফের রমরমা হয়ে উঠেছে কালুরঘাট এলাকায় বালু উত্তোলন।

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট