চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম গতিশীল করতে আমদানি পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য আনার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পণ্যের নিরাপত্তা ও ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ নিশ্চিত করা, কনটেইনারের ফ্রি টাইম ১৫দিন করা, চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটের জাহাজ ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক করার পাশাপাশি বন্দরের চার্জ কমানো, মেইন লাইন অপারেটরদের ওয়েব সাইটে এবং সেবা তালিকায় চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে পণ্য পরিবহন সেবা যুক্ত করা ও প্রচার করা, পানগাঁও থেকে রাতের বেলা ছাড়াও দিনেও যাতে পণ্য পরিবহন করা যায় সে ব্যবস্থা করাসহ গুচ্ছ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালের হ্যান্ডলিং কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে মেইন লাইন অপারেটরগণের সাথে মতবিনিময় সভা’য় এসব প্রস্তাবনা উঠে আসে। সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন আর কেউ সিন্ডিকেট করতে পারবে না। সেই দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। কোন সিন্ডিকেটের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই আমি তা বিলুপ্ত করবো। আপনারা আমাকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিন্তা করবেন, ব্যক্তি হিসেবে না।
বন্দর ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, বন্দর এমন একটা জায়গা যেটি একজনের একার পক্ষে পরিচালনা সম্ভব নয়। এটি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের মাধ্যমে সচল থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও চট্টগ্রাম বন্দর যদি ঠিক থাকে তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঠিক থাকবে। মনে রাখতে হবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইস্যু যেন কোন ভাবে বিঘ্নিত না হয়। আমরা আমাদের ছোট স্বার্থের জন্য দেশের বৃহৎ স্বার্থকে যেন নষ্ট না করি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদেরকে সেক্রিফাইস মাইন্ডের হতে হবে।তিনি আরো বলেন, পানগাঁওয়ে আগের সেই চিত্র নেই। শুল্কায়নে হয়রানি বন্ধে পুরো কাস্টমস কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করা হয়েছে। সব ধরনের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি ডেডিকেটেড বার্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে। বাণিজ্য বাড়াতে ওপেন আইজিএম চালুর বিষয়ে এনবিআরের সাথে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে এনলিস্টেড লাইসেন্সধারীদের কেন আবার পানগাঁওয়ের জন্য আলাদা লাইসেন্স করতে হবে বা অনুমতি নিতে হবে তা কাস্টমসের সাথে আলোচনা করা হবে। পানগাঁও আলাদা কোন টার্মিনাল নয়। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন ঢাকা কমলাপুর আইসিডির মতোই বন্দরের আরেকটি টার্মিনাল। সভায় পানগাঁও টার্মিনালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা, সমস্যা ও জটিলতা এবং সমাধানের প্রস্তাবনা দিয়ে বক্তারা বলেন, বন্দরের কোন সিদ্ধান্ত হলে তা বাস্তবায়নের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এমএলওদের নতুন সিদ্ধান্ত জানাতে এবং সেটি বাস্তবায়ন করতে প্রিন্সিপালকে বোঝাতে হয়।
পানগাঁওয়ের পণ্য পরিবহন খরচ সড়ক ও রেল পথের চেয়ে কম হতে হবে। ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট দুটিই চালু থাকতে হবে। পণ্যের সেফটি নিশ্চিত করতে হবে ও পিএন্ডআই কাভারেজ থাকতে হবে। আমদানি পণ্যের কনটেইনার পানগাঁওয়ে ১০দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫দিন করতে হবে। আইজিএমএ লোডিং আনলোডিং পয়েন্ট পানগাঁও যুক্ত করা, দেশে অবস্থান করা বিদেশি বায়ারদের পানগাঁওয়ে নিয়ে ভিজিট করিয়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং বিদেশি বায়ারদের বিজিএমইএ-বিকেএমইএ এর মাধ্যমে বিদেশি বায়ারদের পানগাঁও সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা দেওয়া ও উদ্বুদ্ধ করা, ঢাকার প্রতিষ্ঠানদের পানগাঁওয়ে উৎসাহী করা, তৈরি পোশাক ছাড়াও অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি পানগাঁও থেকে চালু করার ব্যবস্থা করলে বন্দরের পানগাঁও টার্মিনাল ঘুরে দাঁড়াবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমান, ডেপুটি কনজাভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম, সচিব ওমর ফারুক, পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ, পরিচালক মো. সাজ্জাদুর রহমান, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি অমিয় সংকর বর্মন, সহ-সভাপতি খাইরুল আলম সুজন, পরিচালক (পোর্ট এন্ড কাস্টমস) দোলন বড়–য়া, এমএসসি শিপিংয়ের প্রতিনিধি মো. আজমির হোসাইন চৌধুরী, মায়ের্কস বাংলাদেশের মাহমুদুল করিম ও তাহসিন নাজিম, বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং এসোসিয়েশনের এ কে আজাদ, সি গ্লোরি’র জহির উদ্দিন জুয়েল, বন্দরের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার (অপারেশন) গোলাম মো. সরওয়ারুল ইসলাম, ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার (প্রশাসন) হাসিনা আরজু, টার্মিনাল ম্যানেজার মো. সাইফুল আলম, টার্মিনাল ম্যানেজার (আইসিটি, পানগাঁও) আশরাফ করিম চৌধুরী, সিএমএ-সিজিএম শিপিংয়ের এনামুল হক, ট্রান্সমেরিন লজিস্টিকসের এসোসিয়েট ডিরেক্টর মুহাম্মদ জিয়াউল কাদের, কলম্বিয়া এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের মো. সাইফুল কাদের, ম্যাঙ্গোলাইন লিমিটেডের হাবিবুর রহমান, করিম শিপিং লাইনের অপু দাশ, নামিরা ফিরোজা কোম্পানির মনজুর রাশেদ প্রমুখ।
পূর্বকোণ/ইব