মেসার্স রহমান ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠানটি চালুর কিছুদিন পরই ঋণের জন্য আবেদন করা হয় নগরীর ষোলশহরের কৃষি ব্যাংকে। কোন ধরনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠানটির ঋণ মঞ্জুরি করেন। তাও আবার জামানতবিহীন (এলটিআর পদ্ধতি)। যাকে বলা হয় ‘লোন এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিট বা বিশ্বাসের ঋণ’।
কিন্তু ঋণ পাওয়ার পর সেই বিশ্বাস আর বেশিদিন টেকেনি। বরং ঋণের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ঋণের ৪৮ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার টাকা পাওনা কৃষি ব্যাংক। যা সুদাসলে দাঁড়িয়েছে ২০৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৪ টাকা। এ ঘটনা ২০০৮ সালের। ঠিক এক বছর পর একই কায়দায় একই শাখা থেকে ঋণ নেয় এন এ কর্পোরেশন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকার ঋণের টাকা নিয়ে উধাও প্রতিষ্ঠানটিও। যার কাছে সুদাসলে ব্যাংক পাওনা ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে জামানত ছাড়াই এভাবেই ৭০ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে উধাও তিন ব্যবসায়ী। আর এ ঋণ পেতে সহযোগিতা ছিল খোদ ব্যাংকটিরই ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তার। ব্যবসায়ী-ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজসে এভাবেই ব্যাংকের টাকা নিয়ে লাপাত্তার ঘটনা ঘটে নগরীর কৃষি ব্যাংক ষোলশহর শাখায়। প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও টাকা পাওয়ার নামগন্ধও নেই। বরং সুদ আসলসহ ব্যাংকটির বর্তমানে পাওনা রয়েছে ৩০৪ কোটি ১৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে এমন তথ্য।
যদিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি কারও। জাল জালিয়াতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন: মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের মালিক হেফাজতুর রহমান, মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাহবুবুল আলম চৌধুরী, মেসার্স এন এ কর্পোরেশনের মালিক মো. নুরুল আবছার, কৃষি ব্যাংকের সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক এস কে এস মুরশেদ, সাবেক আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইলিয়াছ বাঙ্গালী, ঊর্ধ্বতন মুখ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাশেম, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ এইচ এম গোলাম কিবরিয়া খান, সাবেক কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক আতিকুল আলম জানান, ঋণ প্রস্তাবের পূর্বে রেকর্ডপত্র যাচাই, আইন বিধি, নিয়মনীতি শতভাগ পরিপালন হয়নি। মূলত আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন। কমিশনের নির্দেশে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
একটি মামলায় হেফাজতুর রহমান, ইলিয়াছ বাঙ্গালী, এস কে এস মুরশেদ, নাছির উদ্দিন, এ এইচ এম গোলাম কিবরিয়া খান, মাহাবুবুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে পারস্পরিক যোগসাজশ, প্রতারণা, অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে নিজে লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণপূর্বক পরিশোধ না করে ৪৮ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধ আনা হয়। যা সুদ আসলে বর্তমানে পাওনা ২০৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
অপর মামলায় নুরুল আবছার, এস কে এস মুরশেদ, ইলিয়াছ বাঙ্গালী, মোহাম্মদ হাশেম, এ এইচ এম গোলাম কিবরিয়া খানের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। যা সুদ আসলে বর্তমানে ব্যাংক পাওনা ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
পূর্বকোণ/ইব