নদী ও সাগরের তীর রক্ষায় হাজার কোটি টাকার দুই মেগাপ্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে টেন্ডার গ্রহণ করা হবে। অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পাউবো। তবে অন্য প্রকল্প থেকে অর্থ সাশ্রয় করে এসব প্রকল্পে অর্থ জোগান দেওয়ার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৭ মে একনেক সভায় কর্ণফুলী নদীর বোয়ালখালী উপজেলা এবং বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গুর তীর প্রতিরক্ষা-বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পে আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলায় সাগর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ভাঙন প্রতিরোধে ৮৭৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে বোয়ালখালীর ভাঙনরোধ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৪ কোটি নয় লাখ টাকা। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে প্রকল্পের মেয়াদ-কাল ধরা হয়েছে। ২০২৭ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয় হওয়ার কথা রয়েছে।
পাউবোর কর্মকর্তারা জানান নভেম্বরে টেন্ডার গ্রহণের পর তা মূল্যায়ন ও ঠিকাদার নিয়োগে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। আগামী বছরের ফেব্রæয়ারি বা মার্চ মাসের দিকে কাজ শুরুর আশা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ কোর্ড (অর্থ ছাড়) অনুমোদন দিয়েছে। এরফলে কাজ শুরু করার টাকা বরাদ্দের আর সমস্যা নেই। কারণ আমাদের অন্য প্রকল্পের টাকা রয়েছে। সেই টাকা এই প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।’
তিনি বলেন, আনোয়ারা ও বাঁশখালীর সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। আগামী বর্ষায় নোনা পানি লোকালয়ে ঢোকে যাবে। তাই বর্ষার আগে কাজ শুরু করার আশা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বড় প্রকল্প নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। অর্থাভাবে চাপা পড়ে যায় এই দুটি প্রকল্পও। তবে জরুরি প্রকল্পগুলো নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে একাধিক সভা হয়। চট্টগ্রামের এই দুটি মেগা প্রকল্প নিয়েও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দুটি সভা হয়েছে। সভায় শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেন। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলী নদী ও একাধিক খালের ভাঙনরোধ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। ৬ দশমিক ৪৭০ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন খালের ভাঙনরোধে কাজ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (রাঙামাটি বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) শওকত ইবনে সাহীদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আনোয়ারা অংশে আট প্যাকেজের মধ্যে চার প্যাকেজ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নভেম্বর মাসে টেন্ডার জমা নেওয়া হবে।’ আনোয়ারা অংশে ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে ১৯৬ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমদ বলেন, ১৫ প্যাকেজের মধ্যে সবকটির টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।’ প্রকল্প দুটি মে মাসে একনেক সভায় পাস হওয়ায় চলতি অর্থ বছরে (২৪-২৫ সাল) বরাদ্দ রাখা হয়নি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার কথা বলেছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমদ বলেন, ‘আমাদের অন্য প্রকল্প থেকে অর্থ সাশ্রয় করে এই প্রকল্পগুলোর অর্থ জোগান দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালসমূহের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনরোধকল্পে তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এবং বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা (১ম পর্যায়) প্রকল্প।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প দুটির ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলায় সাগর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ৮৭৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে আনোয়ারা উপজেলায় ৩২০ কোটি টাকা এবং বাঁশখালী উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। বোয়ালখালী ভাঙনরোধ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা।
পূর্বকোণ/ইব