চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডের (সিইউএফএল) সার সরবরাহ নিয়ে ডিলারদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ১ অক্টোবর থেকে প্রতি ট্রাকে ১৫ টনের স্থলে ১০ টন করে সার সরবরাহ দেওয়ায় এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ টন সার সরবরাহ দেওয়া না হলে আগামী ১ নভেম্বর থেকে সার উত্তোলন বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুবুল আলম খান।
এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডিলারদের আগে থেকেই সিইউএফএল থেকে প্রতি ট্রাকে ১৫ মে. টন করে ইউরিয়া সার সরবরাহ দেওয়া হতো। কিন্তু ১ অক্টোবর থেকে প্রতি ট্রাকে ১০ মে. টন করে ইউরিয়া সার সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। যদি প্রতি ট্রাকে ১০ মে. টন সার দেওয়া হয়, তাহলে বাকি ৫ মে.টন সারের জন্য ডিলারদেরকে আলাদাভাবে সরবরাহ খরচ দিতে হয়। বস্তার মধ্যে বারবার হুক (ছিদ্র হয়ে যায়) মারা হয়। এতে ডিলারদের সার উত্তোলন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সরকারের নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করে ডিলাররা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ কারণে ভবিষ্যতে ডিলাররা সার উত্তোলন করতে অনীহা প্রকাশ করবে। যদি ডিলাররা সার উত্তোলন বন্ধ করে দেয় তাহলে চট্টগ্রামসহ নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় ইউরিয়া সারের সংকট সৃষ্টি হবে। এ আট জেলায় বছরে আনুমানিক সারের চাহিদা রয়েছে সাড়ে তিন লাখ টন।
ডিলাররা সার উত্তোলন বন্ধ করার কারণে ৮ জেলায় ইউরিয়া সারের সংকট সৃষ্টি হলে তার দায়ভার কোনো ডিলার বহন করবে না। এ ব্যাপারে ৮ অক্টোবর সিইউএফএল’এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর আবেদনও করা হয়। যার অনুলিপি বিসিআইসি চেয়ারম্যানকেও দেওয়া হয়। কিন্তু বিসিআইসি’র চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ডিলার-কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সিইউএফএল থেকে প্রতি ট্রাকে ১০ মে.টনের পরিবর্তে প্রতি ট্রাকে ১৫ মে.টন করে ইউরিয়া সার দেওয়ার জন্য ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে অবহিত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সিইউএফএলএ দৈনিক ইউরিয়া সার উৎপাদন হয় ১১শ মেট্রিকটন। চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুরে আনুমানিক ২ লাখ টন সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ৮ জেলায় ডিলারের সংখ্যা ৮১২। ডিলাররা প্রতি টন ১২৫০ টাকা সিইউএফএলকে পরিশোধ করে প্রতি টন ১৩৫০ টাকা দরে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। এদিকে সিইউএফএল থেকে লক্ষীপুর একটি ট্রাকের ভাড়া ২২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে সিইউএফএল থেকে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পরিবহন ভাড়া প্রতি ট্রাক ৯ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে ১৫ টনের স্থলে ১০ টন সার পরিবহনের একই ভাড়া গুনতে হয় ডিলারদের। ফলে ডিলাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে সার উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সিইউএফএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, লোডিং ঠিকাদারের হাইকোর্টে একটি রিটের কারণে ১৫ টনের স্থলে ১০ টন করে ডিলারদের সার সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে ডিলারদের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করে এ ব্যাপারে অতি সহসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
ডিলাররা সার উত্তোলন বন্ধ করে দিলে কৃষিতে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কৃষি অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো.আবদুস সোবহান জানান, চলতি আমন মৌসুমে তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে বোরো মৌসুমে প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডিলারদের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর বিসিএসআইকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব