চট্টগ্রাম শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪

চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র

চট্টগ্রামের অবৈধ সেই মাছ বাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১২ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় গড়ে ওঠা সেই মাছ বাজারসহ (মৎস্য অবতরণকেন্দ্র) অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া ও নতুন করে দখল না করার বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সহায়তায় নদী দখল করে এই মাছ বাজার নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ও নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজ হওয়ার পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় সরকার। এছাড়াও গত ৫ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আগামী ২ মাসের মধ্যে দেশের নদীর সঠিক সংখ্যা চূড়ান্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডাবিøউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

 

গত ২৮ আগস্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (রিট-১) জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে মাননীয় হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও কে এম জাহিদ সারওয়ার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট পিটিশন-২৪০২/২০২৩ শুনানি শেষে গত ২৯ মে খারিজ করে দেন।’ এই বিষয়ে জানতে চাইতে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ‘নদী উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দুটি রিট মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। কিন্তু মৎস্য অবতরণকারী প্রভাবশালীদের কারণে নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। দ্রæত কর্ণফুলী নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সীমানা নির্ধারণ, বৃক্ষরোপণ ও জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার উপযুক্ত সময়।’

 

গত বৃহস্পতিবার মাছ বাজারসহ কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া ও নতুন দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মাইকিং করে ঘোষণা দেয়। চাইলে জেলা প্রশাসনের সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার ইমরানুল করিম ডালিম গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা ও উচ্ছেদ অভিযান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

 

নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠে মৎস্য অবতরণকেন্দ্র : ২০১০ সালে কর্ণফুলী নদীর সীমানা নির্ধারণ, দখল, ভরাট ও নদীর তীর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ রিট দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট শুনানিশেষে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, সরকারি বিধি-বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই মাছ বাজার নির্মাণ করা হয়। সাবেক এক মেয়র ও আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার প্রত্যক্ষ সহায়তায় নদী দখল করে মাছ বাজার নির্মাণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

জানা যায়, ২০১৫ সালে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মধ্যবর্তী এক লাখ ৭৩ হাজার ২৬৩ বর্গফুট জায়গা বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে বছরে ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৫২৩ টাকা হারে ইজারা দেয় চট্টগ্রাম বন্দর। পরবর্তীতে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে মাছ বাজারের সঙ্গে নির্মাণ করা বরফকল ও হিমাগার। দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। জেলা প্রশাসন ও বন্দরের বিরোধ : ২০১৬ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক চিঠিতে দেখা যায়, হাইকোর্ট বিভাগের রিটের আদেশে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের তীরে উন্নয়ন, ফাইলিং, নির্মাণ কাজ, স্থায়ী ও অস্থায়ী অবকাঠানো সকল ধরনের কাজ বন্ধ এবং জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন তা অবহিত করে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে ইজারার বিষয়ে মতামতের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। ডিসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, কর্ণফুলী নদীর হাই ওয়াটার মার্ক অর্থাৎ ১৫০ ফুট পর্যন্ত চবক’র এখতিয়ারধীন।

 

২০২২ সালের ৭ ও ৯ নভেম্বর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন। ১০ নভেম্বর জেলা প্রশাসনকে একটি প্রতিবেদন দেন। ফিশারিঘাট মাছ বাজার ও বরফকল নদীর তীরের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে ওই স্থান খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দেন তিনি। উচ্ছেদ নির্দেশ : ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (মাছ বাজার) উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহাবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশনার পরও দেড় বছর ধরে অবৈধ মাছ বাজার উচ্ছেদের কোনো প্রক্রিয়া দেখা যায়নি।

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট