এক মাস পর চালের বাজারে গিয়ে অবাক বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া রমজান। আগে যে চাল কেজিপ্রতি ৭০ টাকা দরে কিনতেন তা কিনেছেন ৭৫ টাকা দরে। তিনি বললেন, নিত্য-ভোগ্যপণ্যের দামের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন চালের বাড়তি দামে জনজীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অজুহাতে বেড়ে যায় চালের দাম। আগস্ট মাসে সরকার পতনের পর চালের দাম আরেক দফায় বেড়ে যায়। পরিবহন সংকট ও গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে বাড়ানো হয়েছিল চালের দাম। বন্যার অজুহাতে তৃতীয় দফায় বাড়ানো হয় চালের দাম। দুই মাসের ব্যবধানে চালের দাম তিন দফায় বস্তাপ্রতি অন্তত ৫-৬ শ টাকা বাড়ানো হয়। অনেকটা সেই বাড়তি দামে এখনো অস্থির চালের বাজার।
তবে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজার বড় শিল্প গ্রুপ ও মিলার সিন্ডিকেটে জিম্মি। বাজার মনিটরিং না থাকায় কারণে-অকারণে ছুঁতো ধরেই চালের দাম বাড়ানো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। চালের অন্যতম বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, দেশে চালের সংকট নেই। তারপরও দুই মাসের মধ্যে তিন দফায় চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। কর্পোরেট গ্রুপ ও বড় মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত মাসের বন্যায় রোপা আউশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমনও সময় মতো রোপণ করা যায়নি। সবমিলে দেশের ধানের মজুত ও চাষাবাদের অবস্থা বুঝে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম। তিনি বললেন, রোপা আমন বাজারে আসবে ডিসেম্বর মাসে। এখন সরকারি-বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করা হলে চালের দাম কমবে। অন্যথায় সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে চালের দাম বাড়তে থাকে। সেই অস্থিরতার অজুহাতে দুই দফায় বস্তাপ্রস্তি অন্তত চার শ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। আর গত মাসে বন্যার অজুহাতে বাড়ানো হয় আরও দুই শ টাকা। তিন ধাপে বস্তাপ্রতি ৫-৬শ টাকা বাড়ানো হয় চালের দাম।
তবে চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণের কারণে সিদ্ধ ও মোটা সিদ্ধ চালের দাম বেশি বেড়েছিল। এই দুই ধরনের চালের দাম এখন কিছুটা কমেছে। অন্য ধরনের চালের দাম কিন্তু কমেনি। চট্টগ্রামের চালের পাইকারি মোকামে দেখা যায়, বাজারে স্বর্ণা সিদ্ধ (ভালো মান) চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২৮-২৯শ টাকা। মধ্যমানের সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০-২৬শ টাকা। গুঁটি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৩৫০ টাকা থেকে ২৪শ টাকা। মোটা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২১৫০-২২শ টাকা। জিরা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৩৫০-৩৪৫০ টাকা। মিনিকেট সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৮২০-২৯শ টাকা। মিনিকেট আতপ বিক্রি হচ্ছে ৩২শ টাকা। কাটারি আতপ বিক্রি হচ্ছে ৩৬শ টাকা দরে। নাজিরশাইল ২৯০০-৩০০০ টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে চাল রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত করেছিল ভারত সরকার। বর্তমানে চাল রপ্তানি দর বেঁধে দিয়েছে তারা। বাংলাদেশ সরকারও চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এই অবস্থায় সরকারি- বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করা হলে চালের দর কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সরকারি মজুত : সরকারের কাছে বর্তমানে ১৭ লাখ ১৭ হাজার ২০২ মে. টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এরমধ্যে চালের মজুত ১২ লাখ ২৭ হাজার ৪৬৪ টন, গমের মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২৫২ টন। ধানের মজুত ৩৪ হাজার ৫৯৪ টন।
পূর্বকোণ/ইব