আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, “২০২১ সালের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পুরো নির্বাচনটি এক অনিয়মের উৎসবে পরিণত হয়েছিল। এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত তামাশা, প্রহসনের নির্বাচন, সরকারি দল মনোনীত প্রার্থীকে মেয়র ঘোষণা দেয়ার কৃত্রিম আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।”
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ২০১৬ মতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কোন প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বিবাদী রেজাউল করিম চৌধুরী এবং তার কর্মীদের আইন মান্য করার বিষয়ে উদাসীনতা সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। বিবাদী এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছেন। এক নম্বর বিবাদী (রেজাউল করিম চৌধুরী) প্রকাশ্যে আইন অমান্য করে বাদী শাহাদাত হোসেনের নির্বাচনী প্রচার কর্মী, প্রচার কাজে ব্যবহৃত মাইক, সিএনজি ট্যাক্সি ও রিকশা ভাঙচুর এজেন্টের মারধর হুমকি প্রধানসহ নির্বাচনী আচরণ বিধি ২০১৬ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় প্রধান শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবাদী নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে শতাধিক মোটরসাইকেল ও ট্রাকযোগে হাটহাজারী, নন্দিরহাট, দক্ষিণ পাহাড়তলীতে প্রাচারণা চালিয়ে নির্বাচনী বিধিমালা চরমভাবে লঙ্ঘন করেছেন। ভোটারদের খাদ্য পরিবেশন, উপহার সামগ্রী প্রদান করেও আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিবাদী স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে যাতে দেখা যায়, বিবাদীর পক্ষে পরিচালনা কমিটি ২০২১ এর প্রধান সমন্বয়ক ও চেয়ারম্যান হিসেবে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের। কিন্তু প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে সংসদ সদস্যের নাম থাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী আচরণবিধি ২০০৯ ও ২০১৬ এর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ড রয়েছে।
যার মধ্যে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ব্যঘাত ঘটিয়ে বিবাদীর পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করার এবং শাহাদাত হোসেনের পক্ষের লোকজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁর ভোটারদের ভোট কেন্দ্র ত্যাগে বাধ্য করার বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। এসব বিষয়ে বিবাদী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। অপরদিকে ইভিএম মেশিন নিয়ন্ত্রণে রেখে বিবাদীর পক্ষে ভোট নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে আসে। সব মিলিয়ে ২০২১ সালের পুরো নির্বাচনটি এক অনিয়মের উৎসবে পরিণত হয়।
নির্বাচনের পর পরই জাতীয় দৈনিকে ‘নজিরবিহীন ভোট ডাকাতের নির্বাচন’ শিরোনামে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। পর্যবেক্ষণে চসিক নির্বাচনকে নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্থানীয় দৈনিকের শিরোনামগুলো তুলে ধরে ভোট ডাকাতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।
নির্বাচনের বাদীর সঙ্গে বিবাদীর প্রাপ্ত ভোটের বিশাল ব্যবধান অবিশ্বাস্য অযৌক্তিক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায়, সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এক নম্বর বিবাদীকে নির্বাচিত ঘোষণা করার জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী সংস্থা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬ এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন (ভোটিং মেশিন) ২০১৯, চরমভাবে লঙ্ঘন করে এবং দুর্নীতিমূলক ও বেআইনি কার্যকলাপ এবং আচরণের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এক নম্বর বিবাদীকে তর্কিতভাবে মিথ্যার আশ্রয়ে নির্বাচিত করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত গেজেট মতে বিবাদী রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা বেআইনি, অবৈধ ও ভিত্তিহীন ঘোষণা করা হল। সার্বিক বিবেচনায় বাদী তার দাবি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব