চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

মৃত্যুর বড় একটি অংশও কম বয়সী ­­­ রোগী বাড়লেও চট্টগ্রামে গড়ে ­­­ ওঠেনি বিশেষায়িত হাসপাতাল ­­­ হৃদরোগের জন্য খাদ্যাভ্যাসকেই ­­­ প্রধানত দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা

হৃদরোগে আক্রান্তের ৪০% তরুণ

ইমাম হোসাইন রাজু

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

শহীদুল ইসলামের বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন বছর খানেক আগে। গেল মাসেই অফিসে কাজ করা অবস্থায় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জানা যায় শহীদুল হার্ট এটাক করেছেন।

 

ফটিকছড়ির বাসিন্দা রাজু। কাজের মধ্যেই বুকে তীব্র চাপ ওঠে তাঁর। হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল, সাঁইত্রিশের রাজুর মাইল্ড এটাক হয়েছে। সর্বশেষ গত মাসেই নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে তার বাইপাস সার্জারি হয়।

 

শহীদুল-রাজুর মতোই সম্প্রতি সময়ে অল্প বয়সে হার্ট এটাকের সমস্যা বেশ বেড়েছে। হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাই কম বয়সী। ইদানিং সময়ে হাসপাতালে যারা হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বড় অংশ ২০ থেকে ৪০ বছরের তরুণ-তরুণী।

 

সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও চিকিৎসকরা বলছেন, এক দশক আগেও ৩০ বছরের নিচে কোন হৃদরোগের রোগী পাওয়া যেত না। কিন্তু বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্তের প্রায় ৪০ শতাংশই হচ্ছে তরুণ। গেল এক বছরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তথ্যও প্রায় একই কথা বলছে।

 

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের এ পর্যন্ত বিভাগে ১৩ হাজার ৪৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি কম বয়সী। এছাড়াও ৪০ বছরের উপরেও একটি অংশ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় হাসপাতালে। আর মৃত্যু হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৩ জন। যারমধ্যে একটি অংশ হার্ট এটাকে মারা যান। এরমধ্যে অনেকেই আছেন কম বয়সী তরুণ।

 

এ সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও হৃদরোগ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার ও বেসরকারি হাসপাতালেও অল্প বয়সী রোগী বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতির জন্য অতিরিক্ত জাংক ফুড গ্রহণ, জীবনাচারণে পরিবর্তন, কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়াসহ নানা বিষয়কে দায়ী করছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে বলেন, ৫ থেকে ১০ বছর আগেও তরুণ ও যুবকদের মধ্যে হৃদরোগ তেমন একটা পাওয়া যেতো না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ৪০ বছরের নিচে বহু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। যা উদ্বেগের বিষয়।

 

যুবক ও তরুণদের মধ্যে হৃদরোগ বাড়ার পেছনে ফাস্ট ও জাংক ফুডের পাশাপাশি শারীরিক পরিবর্তন এ জন্য দায়ী উল্লেখ করে চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, এখনকার সময়ের শিশু থেকে শুরু করে তরুণদের মধ্যে রাতজেগে মোবাইল গেজেট ব্যবহার মারাত্মক নেশায় পরিণত হয়েছে। এ কারণেও কিন্তু হরমোনগত সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। তাতে করে মানসিক থেকে শুরু করে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। ফলে একসময়ে এসে তারা হৃদরোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি মারত্মক হতে থাকলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।

 

গড়ে ওঠেনি বিশেষায়িত হাসপাতাল : দেশের মোট জনসংখ্যার চার থেকে পাঁচ ভাগই হৃদরোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলেই আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। দিনদিন রোগী বাড়তে থাকলেও সেই হারে বাড়ছে না চিকিৎসার সহজলভ্যতা। দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও গড়ে ওঠেনি হৃদরোগীদের জন্য বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল। অথচ হৃদরোগের সবকিছুই রাজধানী কেন্দ্রিক। এই অবস্থায় পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় তিন কোটি মানুষের ভরসা কেবল চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। তবে অনেক রোগীর ভরসার এই বিভাগটির অবস্থাও নাজুক। রোগীর চাপ কয়েকগুণ বাড়তি থাকলেও এখানে মাত্র একটি ক্যাথল্যাব (রিং পড়ানোর যন্ত্র) দিয়ে কোনোরকমে চলছে হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা। বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল না থাকায় পুরো অঞ্চলের বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট