প্রান্তিক এলাকায় সামাজিক সম্প্রীতি উন্নয়ন ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে পারলে জাতিসংঘের নারী শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ সহজ হবে মনে করেন চট্টগ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর হোটেল আগ্রাবাদে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত নারী শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থায়ীয়করণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব উইমেন পিসবিল্ডারস (জিএনডব্লিউপি)।
চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ এবং কক্সবাজার সদর ও উখিয়া উপজেলার ৪৮ জন অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ৪টি স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে শেষ হল তিন দিনব্যাপী এ কর্মশালা। বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে অবদান রাখতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, সাংবাদিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং উন্নয়ন কর্মীরা এ কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় এ কর্মশালা। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সমাপনী অনুষ্ঠানে জিএনডব্লিউপির সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. জেসমিন নারিও গ্যালাসি, বিএনপিএসের পরিচালক শাহনাজ সুমি, জিএনডব্লিউপির বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার পাহিমা আহমেদ, বিএনপিএসর উপপরিচালক নাসরিন বেগম এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় উপজেলা পর্যায়ে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জ, সংঘাতময় পরিস্থিতে করণীয় ও দুর্যোগকালীন সময়ে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ সংক্রান্ত আলোচনা হয়।
তিনদিনে ১৯টি সেশনে স্থানীয়করণ কর্মশালায় নারী শান্তি নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য, জেন্ডার রীতিনীতি, কমিউনিটির মধ্যে দ্বন্দ্বের মূল কারণ, বাংলাদেশে শান্তি ও সংঘাত, মানবাধিকার এবং খসড়া উন্নয়নে বিএনপিএসের কাজের অভিজ্ঞতা এবং রোডম্যাপ নির্ধারিত হয়। সেখানে বাল্যবিবাহ, মাদক, সহিংসতা, দারিদ্র্যতা এবং ধর্মীয় সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারীদের নানা প্রতিবন্ধকতা উঠে আসে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত থেকে জিএনডব্লিউপির সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. জেসমিন নারিও গ্যালাসি বলেন, বাংলাদেশের নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনতে হবে। এজন্য যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও সংঘাত বন্ধে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ, নাগরিক সমাজ এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত সমন্বয় করেই এগোতে হবে। এজন্য স্টেয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। স্টেয়ারিং কমিটিকে সঠিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
বিএনপিএসের পরিচালক শাহনাজ সুমি বলেন, নারীর সমতা রক্ষা, বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, তৃণমূল নারী সংগঠনের বিকাশ করতে হলে অবশ্যই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে যদি জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ করা যায় তাহলে অবশ্যই নারীরা এগিয়ে যাবে। বিএনপিএসনপিএস ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বৈষম্যহীনতা, নারীদের নিরাপত্তা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কাজ করছে। আমরা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অনেক নেটওয়ার্ক ও ফোরামের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছি।
প্রশিক্ষণের ভবিষ্যত রোডম্যাপ তুলে ধরে বিএনপিএসের উপপরিচালক নাসরিন বেগম বলেন, ৪ উপজেলায় ৪টি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হয়েছে। আগামী এক বছর গঠিত ৪টি কমিটি নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডার স্থানীয়করণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অবদান রাখবে। একইভাবে আইনের দিক থেকেও নারী ও শিশুদের নির্যাতন রোধে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে সহায়ক হবে এ কমিটিগুলো।
জিএনডব্লিউপির বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার পাহিমা আহমেদ বলেন, সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে নারীর অবদানই বেশি থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নারীর এসব অবদান তেমনভাবে স্বীকৃতি পায় না। এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে নারীদের কীভাবে বের করে আনা যায়, এরই পেক্ষিতে ২০০০ সালে তৈরি করা হয় ইউএনএসসিআর-১৩২৫ রেজ্যুলেশন। মূলত এ রেজ্যুলেশনকে ঘিরেই সরকার বাংলাদেশে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের একেকটি উপজেলার সমস্যা একেক ধরনের। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারলেই নারীর উন্নয়ন হবে, এতেই বাস্তবায়িত হবে নারী শান্তি নিরাপত্তা। এজন্যই আমরা সকল শ্রেণিপেশার মানুষের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।
পূর্বকোণ/পিআর