চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পানগাঁওয়ে ব্যস্ততা বাড়াতে গুচ্ছ উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

নৌপথে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালের ব্যস্ততা বাড়াতে ছয়টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে বন্দরের ঝিমিয়ে পড়া কনটেইনার টার্মিনাল ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছে কর্তৃপক্ষ।

বিশেষ ছয়টি উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে জাহাজের বিদ্যমান ভাড়া কমাতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি বাতিলে উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে নদীপথে কনটেইনার পরবিহনের ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক হয়ে বর্তমান ভাড়ার চেয়ে ব্যাপক হ্রাস পাবে বলে মনে করেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পূর্ব নির্ধারিত একটি জেটি ছাড়া অতিরিক্তি আরেকটি জেটি পানগাঁওগামী জাহাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বার্থিং প্রায়োরিটির কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম নৌরুটে বর্তমানে ১৯টি নিবন্ধিত জাহাজ রয়েছে। জাহাজগুলোকে নিয়মিত চলাচল করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কনটেইনার অপারটেরসহ অন্যান্য শিপিং লাইনগুলো নদীপথে কনটেইনার পরবিহনের জন্য পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

আমদানি পণ্যের কনটেইনারের গন্তব্য পানগাঁও টার্মিনালের নাম উল্লেখ করে ইমপোর্ট জেনারেল মেনিফেস্ট, বিল অব লেডিং এবং এলসি খোলার বিষয়ে আমদানি-রপ্তানিকারকগণকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।

পণ্য শুল্কায়নে কাস্টমসের জটিলতা নিরসন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে জটিলতা ছাড়াই পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালের হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি ও টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য জাহাজ মালিকদের ও আমদানি-রপ্তানিকারকদের সাথে চলতি মাসেই দু’বার মতবিনিময় সভা করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। সভায় পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালের জন্য গৃহীত ছয় উদ্যোগের কথা জানান। যা ব্যবহার করে পানগাঁও আইসিটিকে ব্যবসাবান্ধব করার জন্য আমদানি-রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।

প্রসঙ্গত, সাড়ে ৩ হাজার একক কনটেইনার ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন এই পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে ২০২৩ সালে ভিড়েছিল ১৪৭টি পণ্যবাহী জাহাজ। অর্থাৎ, গড়ে প্রতিমাসে ১২টির বেশি জাহাজ। নানা প্রতিক‚লতা ও অভিযোগ থাকলেও এই টার্মিনালকে এখন নতুন করে সাজানো হয়েছে।দ্রুত হয়রানিমুক্ত পণ্য পরিবহনের জন্য যাথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

নৌপথ ব্যবহার করে স্বল্পসময়ে বেশি পরিমাণ পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে চালু করা হয় পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল। ৮৯ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা দেশের প্রথম অভ্যন্তরীণ এ নৌ-টার্মিনালে রয়েছে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও অবকাঠামোগত সুবিধা। কিন্তু তারপরও তলানিতে নেমে এসেছে এই টার্মিনালের কার্যক্রম।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, সম্প্রতি কাস্টমস ও আমদানিকারকদের নানা সমস্যার কারণে পানগাঁও টার্মিনাল কেন্দ্রিক পণ্য আমদানি কমে গেছে। আমদানিকারকরা এই রুটের পণ্য আমদানি না করলে স্বাভাবিকভাবেই জাহাজ আসাও কমে যাবে। তবে টার্মিনালের যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। এখানে অধিক পরিমাণ জাহাজ ও পণ্য ওঠানামা সম্ভব। তার সব লজিস্টিক ফ্যাসিলিটি আমরা নিশ্চিত করেছি। আরেকটি জেটি বরাদ্দ, পরিবহন খরচ কমানোসহ ৬টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পানগাঁও বন্দরের স্টোরেজ সক্ষমতা সাড়ে ৩ হাজার টিইইউএস কনটেইনার। বছরে এ বন্দর হ্যান্ডলিং করে এক লাখ ১৬ হাজার টিইইউ কনটেইনার।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটে শিডিউল মেনে ২১টি কনটেইনার জাহাজ চলাচল করতো। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন জাহাজ পানগাঁও এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়ায় এবং মেরিন ট্রাস্ট-১ কলকাতা বন্দরে ডুবে যাওয়ায় এখন এই রুটে ১৯টি জাহাজ চলাচল করে। এদের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ১২০ থেকে ১৩০ একক কনটেইনার। ছোট আকারের এই জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামা করা যায় ৬ ঘণ্টার মধ্যেই। তাই এই ১৯টি জাহাজ একত্রে প্রায় আড়াই হাজার কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁওয়ে পরিবহন করতে পারবে।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট