চট্টগ্রাম সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ­­­ দায়ের কাস্টমসের

মদের চালান আমদানির নেপথ্যে আমদানিকারক-সিএন্ডএফ এজেন্ট

নাজিম মুহাম্মদ

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ আনার নেপথ্যে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় আট জনকে এজাহারভুক্ত ও ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে কাস্টমস।

 

 

 

কাস্টমসের গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। চীন থেকে সাত হাজার ৩’শ ৪৫ কেজি পোশাক পণ্য আনার ঘোষণা দিয়ে ১১ হাজার ৬৭৬ লিটার বিদেশি মদ আমদানি করে নারায়ণগঞ্জের আদমজি ইপিজেডের সুপ্রিম স্মার্টওয়্যার লি.। এক হাজার ১১৪টি কার্টনে এসব মদ আনা হয়েছিল। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির মালিক ঢাকার গুলশানের মৃত হাবিবুর রহমান সিনহার ছেলে আনিসুর রহমান সিনহা।

 

 

চট্টগ্রাম বন্দরে গত ৫ সেপ্টেম্বর মিথ্যা ঘোষণায় আনা এক কনটেইনার বিদেশি মদ জব্দ করে কাস্টমস। ওই ঘটনার সাথে দায়ী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কাস্টমস কমিশনার। কমিটিকে পণ্য চালানের ঘোষণাপত্র দাখিল থেকে শুরু করে আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট ইত্যাদি তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

 

 

 

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মদের চালান আমদানিতে জড়িত থাকার অভিযোগে কমিটি তদন্তে অন্তত ২০জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আট জনকে এজাহারভুক্ত ও ১২ জনকে অজ্ঞাতানামা আসামি দিয়ে ২০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ হাসান।

 

 

মামলার আসামিরা হলেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের মেসার্স সুপ্রীম স্মার্টওয়্যার লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আনিসুর রহমান সিনহা, আগ্রাবাদ গুলবাগ আবাসিক এলাকার সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স হাফিজ ট্রেডিং (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান খালেদ হোসেন মামুন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফেজ মো. বাকির হোসেন, পরিচালক আবদুল গফুর ভুঁইয়া, ইউসুফ আফজল, সিএন্ডএফ প্রতিনিধি রাজিব ওরফে আশারাফ হোসেন রাজু, রিপন ও মিজানুর রহমান।

 

 

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজিব ওরফে আশরাফ, রিপন ও মিজানুর রহমান জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃজন করে শিপিং এজেন্ট আটলান্টিক ইন্টারন্যাশনালের সাথে যোগাযোগ করে মদের চালানটি খালাসের চেষ্টা করেন। শিপিং এজেন্টে দাখিল করা দলিল যাছাই করে দেখা যায়, দাখিলকৃত পরিচয়পত্রটি নকল। পরিচয়পত্রে যার ছবি আছে তার নাম আশরাফ হোসেন রাজু। কিন্তু পরিচয়পত্রে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। রাজু নিজেই শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মদের চালানটির ডেলিভারি অর্ডার নেয়ার চেষ্টা করেছেন। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুপ্রীম স্মার্টওয়্যার লিমিটেড ও সিএন্ডএফ এজেন্ট হাফিজ ট্রেডিং (প্রাঃ) লিমিটেড তাদের সহযোগিদের নিয়ে পোশাক পণ্য আমদানির ঘোষণা দিয়ে বিপুল পরিমাণ মদের চালান আমদানি করেছিল।

 

 

নারায়ণগঞ্জের আদমজি ইপিজেডের কারখানা সুপ্রীম স্মার্ট ওয়ার লিমিটেডের নামে চায়না থেকে আমদানি করা হয় পোশাক পণ্য। প্রায় নয়মাস পার হলেও সেই কনটেইনার কেউ খালাস না নেওয়ায় সন্দেহ হয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের। কনটেইনারটি খুলে পোশাক পণ্যের পরিবর্তে পাওয়া যায় বিদেশি মদ। চালানটি খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের গোলবাগ আবাসিক এলাকার হাফেজ ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। নয়মাসেও ওই চালান খালাস না হওয়ায় সন্দেহ হয়। চালানটি আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দুই কোটি টাকা। মদ আমদানিতে শুল্কহার ৬১১ দশমিক ২০ শতাংশ। এ হিসাবে শুল্ককর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ১২ কোটি টাকা।

 

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট