প্রায় সাড়ে তিন মাস পর মহেশখালীতে ভাসমান দুই টার্মিনাল দিয়েই এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত এলএনজিবাহী কার্গো না থাকায় জাতীয় গ্রিডে এখনই স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা এলএনজিবাহী কার্গো দেশে এলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরপিজিসিএলের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়- মেরামত কাজের জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সামিটের টার্মিনাল দিয়ে গতকাল এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। তবে এদিন এই টার্মিনাল দিয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। যদিও সামিটের এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব। এলএনজিবাহী কার্গো মজুদ না থাকায় সামিট সক্ষমতা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান- দেশে আমদানি করা এলএনজি কার্গো মহেশখালীতে স্থাপন করা দুই ভাসমান টার্মিনাল দিয়েই খালাস করা হয়। এর একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির ‘এক্সিলেন্স’। অন্যটি দেশীয় সামিট প্রাইভেটের মালিকানাধীন ‘সামিট’। এ দুই টার্মিনালের রিগ্যাসিফিকেশন ক্যাপাসিটি এখন দৈনিক ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি।
তবে গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় একটি ভাসমান পন্টুন এসে সামিটের এলএনজি টার্মিনালের এফএসআরইউতে আঘাত করে। এতে একটি এফএসআরইউর ব্যালাস্ট ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় ওই টার্মিনাল দিয়ে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ। প্রায় সাড়ে তিন মাস পর মেরামত শেষে গত বুধবার গ্যাস সরবরাহের উপযোগী হয় সামিটের টার্মিনালটি।
জানতে চাইলে আরপিজিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, বৃহস্পতিবার দুই টার্মিনাল দিয়ে ৬৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ‘এক্সিলেন্স’ দিয়ে ৫৬০ মিলিয়ন এবং সামিট দিয়ে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এলএনজিবাহী কিছু কার্গো আসার পথে। এসব কার্গো আসলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশাবাদী।
ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে ২০ কার্গো এলএনজি:
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি কেনার বিষয়ে সরকারের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির আহবায়ক অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ২০ কার্গো এলএনজি এলে দেশে চলমান গ্যাস সংকট কমার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গ্যাসের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য পেট্রোবাংলার সঙ্গে মাস্টার সেল এন্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট সই করা ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। এর মধ্যে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ৬ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। এছাড়া অক্টোবরে ৫ কার্গো, নভেম্বরে ৫ কার্গো এবং বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জি-টু-জি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলার সঙ্গে সই করা চুক্তির আওতায় কাতারের রাস লাফ্ফান লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (কাতার গ্যাস) থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বর্তমানে ২ দশমিক ৫ এমটিপিএ এলএনজি এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (ওকিউটি) থেকে ১০ বছর মেয়াদে বর্তমানে ১ দশমিক ০ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়াও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হয়।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান- বিদ্যুৎ, সার, শিল্পখাতসহ বিভিন্ন খাতে দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩ হাজার ৮০০ এমএমসিএফ। দেশে গ্যাস সরবরাহের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দৈনিক ৩ হাজার ১৫০ এমএমসিএফ, যা চাহিদার ৮২ শতাংশ। সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে দেশীয় উৎপাদন দৈনিক ২ হাজার ৫০ এমএমসিএফ এবং অবশিষ্ট ১ হাজার ১০০ এমএমসিএফ গ্যাস এলএনজি আকারে আমদানি করা হয়।
পূর্বকোণ/এএইচ