চট্টগ্রাম বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন

দেশে চলমান সকল নৈরাজ্যের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি

বিজ্ঞপ্তি

১২ আগস্ট, ২০২৪ | ৮:২৬ অপরাহ্ণ

মসজিদ-মাজার-মাদ্রাসা-মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় চলমান হামলার তীব্র নিন্দা ও হামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।

 

সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি জানান দলের চেয়ারম্যান মাওলানা এম.এ মতিন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের মহাসচিব স.উ.ম আবদুস সামাদ।

 

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, হাজারো শিক্ষার্থীর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহাবিজয়কে বিতর্কিত করার জন্য একটা মহল নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছে না মসজিদ-মাজার-মাদ্রাসা-মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এদেশে ইসলাম প্রচারক আল্লাহর ওলিদের পবিত্র মাজার ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে চিহ্নিত কিছু দুষ্কৃতকারী।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য মাজার মসজিদে হামলা করেছে চিহ্নিত মহল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মসজিদে নিয়োগকৃত আহলে সুন্নাত মতাদর্শী খতিব ইমামদের বিনা কারণে মসজিদে নামাজ পড়াতে দিচ্ছে না এই মহল। স্বাধীন বাংলাদেশে কারা এ বিভেদ সৃষ্টি করছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি তৈরি করছে তা খতিয়ে দেখে অপরাধীদের বিচার করার দাবি জানান।

 

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব বলেন – বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এ আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে গুলিবর্ষণ করাসহ তারা হামলার শিকার হয়েছে। গত সরকারের সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সারাদেশে আহত হয়েছেন শতশত সেনাকর্মী। তাদের মধ্যে কেউ চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন আবার কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

তিনি নিরীহ জনসাধারণের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ছাত্রদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করার দাবিসহ সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।

 

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের দাবিগুলো হল-

 

১. বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে শাহাদাতবরণ করা বীর শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়নপূর্বক প্রত্যেক পরিবারকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং প্রতিটি শহীদ পরিবারগুলো হতে ন্যূনতম একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

২. মাজার-মসজিদ- মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। সকল নিরীহ জনগণের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 

৩. গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।

 

৪. জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি এবং তাদেরকে নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে ও স্থায়ীভাবে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

 

৬. সব দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত সব অর্থ দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দুর্নীতিবাজদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

 

৭. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

 

৮. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ভোটার তালিকা হালনাগাত করতে হবে এবং আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

৯. সরকার পরিবর্তনের পর থেকে অদ্যাবদি দেশব্যাপী সন্ত্রাস, লুটতরাজ, অগ্নি সংযোগ, ডাকাতি চর দখলের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জবর দখলের যে প্রতিযোগতিা শুরু হয়েছে তা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

১০. পুলিশ বাহিনীর কর্মবিরতির সুযোগ নিয়ে সারাদেশ মাদক কারবারি, ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তাদের কঠোর হস্তে দমন করাসহ পুলিশবাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ বিষয়ে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছি।

 

ছাত্রআন্দোলন এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষ ছাত্রদের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। ছাত্র- যুব- জনতার এ মহাবিজয়কে কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার বানানোর প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র আন্দোলনে শাহাদাতবরণ করা সব বীর শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান নেতৃবৃন্দ।

 

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা তৈয়ব আলী, এডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, এম. সোলাইমান ফরিদ, পীরজাদা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আব্দুর রহিম, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, আন্তর্জাতিক সচিব অধ্যাপক সৈয়দ জালাল উদ্দিন আজাহারী, সহ-দপ্তর সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নূর হোছাইন, শ্রম ও কৃষি বিষয়ক সচিব এম. মহিউল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ আব্দুন নবী আল কাদেরী, নাছির উদ্দিন মাহমুদ, আলমগীর বঈদি প্রমুখ।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট