চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

৬দিন পর আজ থেকে মাঠে নামছে ট্রাফিক পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ আগস্ট, ২০২৪ | ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ছয়দিন পর কাজে ফিরছে নগর ট্রাফিক পুলিশ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পর কাজ ছেড়ে চলে যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

 

গতকাল রবিবার বিকেলে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এ কথা জানান নগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।

 

পুলিশ কমিশনার বলেন, সোমবার (আজ) থেকে নগরীর গুরুতপূর্ণ পাঁচটি পয়েন্টে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সাথে প্রতিটি পয়েন্টে থাকবেন একজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। প্রথমদিকে আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, ওয়াসা, লালখানবাজার এবং আগ্রাবাদ এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজন হলে নিউমার্কেট এলাকায়ও সমন্বয় করা হবে।

 

পুলিশ কমিশনার বলেন, আমি রাস্তাঘাটে আসতে যেতে দেখছি আসলে আমাদের শিক্ষার্থীরা কি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তাদের এ উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। তবে আমার তাদের এ কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।

 

শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক বিষয়ক ট্রেনিং করানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক বিষয়ক কিছু ট্রেনিং করাবো। আর একটি কথা, কোনোভাবেই যেন কোন কুচক্রীমহল সুবিধা নিতে না পারে।

 

পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয় উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সোমবার থেকে আমরা পোশাকে বের হবো। তখন যদি তোমরা আমাকে ধাওয়া করো তাহলে কিন্তু আমি চলে যাবো। গত পরশুও এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এসব শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এসব বিষয়ে খুব সাবধান হতে হবে।

 

সভায় বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।

 

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, তোমাদের তারুণ্য এবং মেধাকে আমরা সম্মান জানাই। এখন তোমাদের দাবি করার সময় না। তোমাদের দাবি তোমরা আদায় করে নিয়েছো। তাই এখন নতুন করে কোন দাবি উত্থাপন না করে আমাদের উচিত সুন্দরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রটিকে গঠন করা। তাই এখন প্রধান প্রায়োরিটি আইনশৃঙ্খলা।

 

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমরা তোমাদের নিয়ে বসেছি। তোমাদের সহযোগিতা চাই, আমরাও তোমাদের সহযোগিতা করবো। থানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমাদের যে কেপিআইগুলো আছে সেগুলো আমাদের শিক্ষার্থীরা রক্ষা করেছেন। এর জন্য আমি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করি। এর পুরো ক্রেডিট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের।

 

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কমিটি করা হবে তা শিক্ষার্থীদের নিয়েই করা হবে। দ্রুত চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে কাজে ফেরাতে হবে। তাদের মধ্যে যে ভয় তা শিক্ষার্থীদের দূর করতে হবে। এর আগে আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে দুই দফা বৈঠক করে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।

 

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলায়-তিনভাগে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। আর তাদের সাথে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও সমন্বয় করবেন। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের লিস্টও করে দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, লালখান বাজার, ওয়াসা মোড় এই গুরুত্বপুর্ণ সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিও থাকবে। প্রয়োজনে স্থান বাড়ানো হবে। প্রতিটি থানায় দল গঠন করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। পুলিশের নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে শিক্ষার্থীরা।

 

থানাভিত্তিক নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি হবে: পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়ার প্রত্যেকটি থানায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি করা হবে। যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার গণ্যমান্যরাসহ ছাত্র প্রতিনিধিরাও থাকবে। আর এই কাজটি ছাত্ররাই করবে, তাহলে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকবে না। আর সংশ্লিষ্ট থানা কমিটির সদস্যদের কাছে আমাদের ওই এলাকার কুইক রেসপন্স টিমের সদস্যদের নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে। যাতে তারা সমন্বয় করতে পারে।

 

শিক্ষার্থীদের থানায় থানায় যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, তোমাদের থানায় থানায় যেতে হবে। না হলে কর্মরত সদস্যদের ভয় কাটবে না। আমাদের পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশের বয়সই তোমাদের চেয়ে বেশি। আমি তাদের সবাইকে বলেছি শিক্ষার্থীরা কোন নাশকতা করেনি। সুতরাং তাদেরকে অভয় দিবে তোমরা।

 

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহতাব মিঞা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদি উর জাদিদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান প্রমুখ।

 

ক্ষতিগ্রস্ত থানা পরিদর্শন: নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-জনসংযোগ) কাজী তারেক আজিজ জানান, বিকেলে (রবিবার) বৈঠক শেষে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া পতেঙ্গা, ইপিজেড, পাহাড়তলী ও কোতোয়ালী থানা পরিদর্শন করা হয়। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, সিএমপি কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট