চট্টগ্রাম বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অবৈধ অনুপ্রবেশ

হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিকার চান ক্লাব সদস্যরা

সিএনএ প্রতিবেদন

১১ আগস্ট, ২০২৪ | ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের, জয় হয়েছে সত্য ও ন্যায়ের। বাতাসে যখন স্বাধীনতার সুবাস, যখন শত শত শিক্ষার্থীর আত্মাহুতির মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছে তখন কিছু সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্ত শিক্ষার্থীদের এই বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নৈরাজ্যে মেতে উঠেছে, তারা বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। গত ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানবিরোধী দুর্বৃত্তদের নৃশংসতা থেকে বাদ যায়নি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবও। সাংবাদিক নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা ও ভাঙচুর করেছে, প্রেসক্লাবে অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।

 

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ৬২ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকে এই প্রতিষ্ঠান গণতন্ত্র, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পীঠস্থান হিসাবে খ্যাত। চট্টগ্রামের মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকদের দ্বিতীয় আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়। ১৫ সদস্যের একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি দ্বারা প্রেসক্লাব পরিচালিত হচ্ছে।

 

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে সব মতাদর্শের মূলধারার পেশাদার সাংবাদিক রয়েছেন। বর্তমানে প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য ২৬৫ জন, অস্থায়ী সদস্য ১৯ জন। প্রতি দুই বছর অন্তর কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকরা অস্থায়ী সদস্য পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটি যোগ্যতর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে উপস্থাপন করে। পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা গোপন ভোটের মাধ্যমে আবেদনকৃত প্রার্থীদের অস্থায়ী সদস্য পদের জন্য নির্বাচিত করেন। সার্বিক আচরণ পর্যবেক্ষণের পর ব্যবস্থাপনা কমিটি সন্তুষ্ট হলে অস্থায়ী সদস্যদের দুই বছর পর স্থায়ী করা হয়।

 

দুঃখের বিষয় হলো, গত ৫ আগস্ট সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছু সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। তারা নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুপ্রবেশ করে এবং স্বঘোষিত পাল্টা কমিটি করার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ ও মাদক মামলার আসামিসহ কিছু দুর্বৃত্ত নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে নানা বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।

গত ৮ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে ক্লাবের সর্বস্তরের সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। দুর্বৃত্ত কর্তৃক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়। সভায় দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে সদস্যরা যেকোন মূল্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সম্মান সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি চট্টগ্রামের দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তারাও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন।

 

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক নৈরাজ্যকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা ও বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট