চট্টগ্রাম রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

খেটে খাওয়াদের জীবিকায় টান

জুবাইর উদ্দিন

২৬ জুলাই, ২০২৪ | ৯:০২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেট মোড়ে ভ্যানে সবজি বিক্রি করে সংসার চালান ওমর ফারুক। চলমান পরিস্থিতির কারণে টানা পাঁচদিন বেচা-বিক্রি নেই তার। তাই ‘দিনে এনে দিন খাওয়া’ এই ব্যক্তির কপালে চিন্তার ভাঁজ। ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য চাল-ডাল জোগাড় করাই কঠিন হয়ে গেছে তার জন্য।

 

জাকির হোসেন বাই লেনের মুখে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা শাহাদাত হোসেন বসেছিলেন মুখে হাত দিয়ে। স্বাভাবিক সময়ে সবজি কেনার জন্য ক্রেতারা তাকে ঘিরে ধরলেও এখন দোকানের সামনে নেই কোনো ক্রেতা। ক্রেতার অপেক্ষায় নির্মিমেষ তাকিয়ে থাকা এই যুবকের প্রশ্ন- কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ? ক্রেতা কমে গেছে মুরাদপুর রেললাইনের পাশে বসে মাছ বিক্রি করা মোহাম্মদ তারেকের দোকানেও।

 

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে তুলনামূলক অনেক কম বিক্রি হচ্ছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে ক্রেতা নেই বললেও চলে। ক্রেতা না থাকায় বেশকিছু মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে চললে সংসার কীভাবে চালাবো?

 

শুধু ফারুক, শাহাদাত কিংবা তারেক নন- চলমান পরিস্থিতির কারণে জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নগরীর মুরাদপুর থেকে ওয়াসা পর্যন্ত এলাকায় দুই শতাধিক হকার। যাদের বেশিরভাগের সংসার চলে দৈনিক আয়েই। এসব হকাররা প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন।

 

হকারদের পাশাপাশি জীবিকায় টান পড়েছে অন্য দিনমজুরদেরও। তাদেরই একজন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় রিকশাচালক কবির। তিনি বলেন, ভাড়া পাই বা না পাই রিকশা বের করলেই মালিককে ১২০ টাকা দিয়ে ফেলতে হয়। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় যাত্রী পাচ্ছি না। কয়েকদিন ধরে কোনো রকমে চলতে হচ্ছে।

 

বিপ্লব উদ্যানের পাশে পান-সিগারেট বিক্রি করছিলেন ষাটোর্ধ্ব আলা উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। হাঁটতে পারি না। পাঁচ-ছয় হাজার টাকার মালামাল এনেছিলাম। সারাদিনে তিনশ টাকা বিক্রি করতে পেরেছি।

 

নাসিরাবাদের আপন নিবাসের সামনে মোহাম্মদ মাসুদ নামে পান-সিগারেট বিক্রেতা বলেন, আজকে সারাদিন না খেয়ে আছি। বাড়ি থেকে সকালে ফোন দিয়ে টাকা পাঠাতে বলল। আমি ধার করে চলার জন্য বলেছি। এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে জানি না।

 

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুই নম্বর গেট এলাকায় বেশ কয়েকটি রিকশা উল্টে দেয়া হয়। রিকশাচালকরা জানান, কারফিউ চলাকালীন রিকশা নিয়ে বের হওয়ায় পুলিশ তাদের রিকশা উল্টে দিয়েছে। সারাদিনে চাল কেনার টাকাও তুলতে না পারায় কারফিউর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছেন তারা।

 

ভ্যানে করে কলা ও পেঁপে বিক্রি করা দেলোয়ার বলেন, কয়েকদিনে ৭-৮ হাজার টাকার ফল নষ্ট হয়ে গেছে। ভ্যানে যা আছে তা বিক্রি করতে না পারলে ফেলে দেয়া লাগবে। কিস্তিতে টাকা নিয়ে কলা ও পেঁপেগুলো কিনেছিলাম। আমার পরিবারে ১২ জন সদস্য। গত তিনদিন ধরে একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। একই অবস্থা আনারস বিক্রেতা মো. কামরুলের।

 

তিনি বলেন, গত বুধবার ১০ হাজার টাকার আনারস কিনেছিলেন। বিক্রি করতে না পারায় প্রায় দুই হাজার টাকার আনারস ফেলে দিতে হয়েছে। এখনও ক্রেতা নেই। হয়তো বাকিগুলোও ফেলে দিতে হবে। একদম পথে বসে যাওয়ার মতো অবস্থা।

 

মসজিদ গলির বাদাম বিক্রেতা মোহাম্মদ সুমন বলেন, আগে রাস্তার পাশে বিক্রি করতাম। তখন প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টাকা বিক্রি হত। গত শনিবার সারাদিন বের হতে পারিনি। আজও (রবিবার) বিক্রি না হলে রাতে বাসার জন্য চাল-ডাল নিয়ে যেতে পারব না। আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না।

 

ওয়াসার মোড়ে রাস্তায় ঠান্ডা পানি পান করিয়ে সংসার চালানো শহিদ মিয়া বলেন, পেটের দায়ে বের হয়েছি। ক্রেতা না থাকায় অনেকগুলো লেবু ফেলে দিতে হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। আবার জমজমাট কেনা-বেচা করি। নিজের আয় দিয়ে নিজের সংসার চালাই। মানুষের কাছে হাত পাততে ভালো লাগে না।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট