চট্টগ্রাম রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আ. লীগ

জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ নেতাদের ভূমিকার তথ্য নেবে আ.লীগ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৫ জুলাই, ২০২৪ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

কোটাবিরোধী আন্দোলনে নৈরাজ্য ও সহিংসতার ঘটনায় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘ভূমিকা’ কি ছিল সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

 

এদিকে, সহিংসতা ও চলমান সংকটে আওয়ামী লীগের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা সহিংসতা মোকাবিলায় দলের অনৈক্যের কথা অস্বীকার করেছেন।

 

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। বিএনপি-জামায়াত ছাত্র আন্দোলনের সুযোগে হত্যাযজ্ঞ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এই ধরনের নাশকতার ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। নগরের ইউনিট-ওয়ার্ড ও উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সর্তক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

 

গতকাল বুধবার দুপুরে বৈঠক করেছেন নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা। বৈঠকের পর তিন শাখার ছয় নেতা পৃথকভাবে সিএমপি কমিশনার ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

 

এ বিষয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ সালাম বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত দেশে জ¦ালাও-পোড়াও করে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তভাবে মোকাবিলা করে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি।’

 

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমরা ভাব বিনিময় ও নাশকতার বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছি।’

 

গত শুক্রবার রাতে জরুরি সভা করে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সভা করেছিল। সভায় নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতাবিরোধী সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্র-যুব ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তবে ওইদিন রাতেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের গণজমায়েত ও সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়।

 

আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগে তৃতীয় পক্ষ নাশকতা সৃষ্টি করেছে। নগরের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্র-যুবলীগের তুমুল সংঘর্ষ হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় ছিল। দুই-তিন জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের কয়েক জন নেতা মাঠে ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলানোর মতো আওয়ামী লীগের সক্ষমতা থাকার পরও আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও হতাশা নেমে এসেছে।

 

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেক পক্ষ নৈরাজ্য ও সহিংসতা মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করেছেন। দলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। সংঘাত এড়িয়ে অরাজকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে শান্তি রক্ষায় সতর্ক ছিলাম আমরা।’

 

গত মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, স্থানীয় এমপি, দলীয় কাউন্সিলরদের কর্মকাণ্ড ও ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, এমপিরা অনেকেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। কী অপমান, লজ্জা! নতুন করে ভাবতে হবে। ক্ষমতায় থেকে আমরা দুর্বল হয়েছি। হাইব্রিডদের চিহ্নিত করতে হবে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘৭১ এর মতো নাশকতা চালায় বিএনপি-জামায়াত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জনসভা ও গণজামায়েত করে জনগণের সামনে তা তুলে ধরা হবে।’

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান ও দলের শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করা হবে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দলীয়ভাবে তদন্ত করা হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইবে।’

 

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ সালাম বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। আমরা সেই নির্দেশনা মতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সেভাবে পরামর্শ দিয়েছি। জনগণকে বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করেছি।’

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট