চট্টগ্রাম রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্ষুব্ধ আমদানিকারকদের প্রশ্ন

ইন্টারনেট অচলের মাশুল কেন ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে

সারোয়ার আহমদ

২৫ জুলাই, ২০২৪ | ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সংযোগ। ঠিক ওই মুহূর্ত থেকে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম। বিঘ্ন ঘটে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ডেলিভারিতেও।

 

ওই সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত শুল্কায়ন সফটওয়্যার এসাইকুডা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুল্কায়ন ও পণ্য খালাসের কাজ করতে পারেনি কাস্টমস, সিএন্ডএফ এজেন্টস, শিপিং এজেন্টস, ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স ও আমদানি-রপ্তানিকারকেরা। সেই পাঁচদিন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক আমদানিকারক বন্দর থেকে পণ্য খালাসের সকল কাজ শেষ করেও পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেননি। পক্ষান্তরে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার পড়ে থাকায় নিয়ম অনুযায়ী স্টোর রেন্ট বা ডেমারেজ চার্জ যোগ হতে থাকে বন্দরের হিসেবের খাতায়। কিন্তু ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন- ইন্টারনেট অচলের মাশুল কেন ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে? তাই ইন্টারনেট অচল থাকার সময়ে বন্দরের স্টোর রেন্ট মওকুফের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার চারদিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা সাইজের একটি কনটেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ মার্কিন ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই সাইজের কনটেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের।

 

একইভাবে ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনারের ক্ষেত্রে এর দ্বিগুণ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। যেমন ৪ দিন পর থেকে পরবর্তী ৭ দিন ৪০ ফুট কনটেইনারে ১২ ডলার, এরপর ২১ দিন পর্যন্ত ২৪ ডলার, ২১ দিন পর থেকে ৪৮ ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়।

 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ পূর্বকোণকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করে সকল শুল্ক ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেও শুধু ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বন্দরের ভেতর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেননি। এই দায় তো ব্যবসায়ীদের না। তারা চাইলেও বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেননি। তাই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে বৃহৎ স্বার্থে ওই পাঁচদিন যেন স্টোর রেন্ট মওকুফ করা হয়।

 

একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশন ও শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছি যেন ইন্টারনেট সংযোগ অচল থাকার সময়ে তারা কোনপ্রকার ডেমারেজ চার্জ ব্যবসায়ীদের উপর আরোপ না করে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো যেন তাদের ঋণে বাড়তি সুদ আরোপ না করে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

 

এদিকে, পণ্য ডেলিভারি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু পূর্বকোণকে বলেন, সিএন্ডএফ এজেন্টসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ব্যাংক, বন্দর, কাস্টমস, ডিপোগুলোর দ্বারে দ্বারে গিয়েও ফিরে এসেছে। ইন্টারনেট অচল থাকায় কেউ পণ্য ডেলিভারির কাজ করতে পারেনি। এই দায় কার? এটি একটি জাতীয় সংকট ছিল। তাই সংশ্লিষ্টরা যাতে কোন বাড়তি মাশুল আদায় না করে তার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা আসলে সবচেয়ে ভালো হয়।

 

উল্লেখ্য, ডিজিটালি পণ্য ডেলিভারির কাজ করা না গেলেও পুরো পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষ ব্যবস্থায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে খুব সীমিত পরিসরে রপ্তানি পণ্য জাহাজে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে গত শনিবার চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানির সুযোগ করে দেয়। তার পরপরই আবার সীমিত পরিসরে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু পণ্য ডেলিভারি নেওয়ারও সুযোগ করে দেয় বন্দর কাস্টমস। তবে তা খুবই সামান্য।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট