পাঁচ বছর বয়সী ফারুকের কন্যা ফাহিমা। রাতে বাবা বাসায় না ফেরা পর্যন্ত ঘুমাবে না। সকালে ঘুম থেকে ওঠে বাবা না দেখলে বাসায় বাধিয়ে দেয় লঙ্কাকাণ্ড। সেই কন্যার বাবা মোহাম্মদ ফারুক (৩২) আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ফারুকের লাশ পড়ে ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেলে হাসপাতালের মর্গে। ফারুকের মোবাইলে কল দিয়ে জানতে পেরে হাসপাতালে উপস্থিত হন স্ত্রী সীমা আক্তার।
শশুড় আব্দুল দুলালকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি। বাসা থেকে অসুস্থ দাদির মোবাইল থেকে কল করে সন্তানরা জানতে চায় বাবার কি হয়েছে মা? সীমা আক্তারের গলা জড়িয়ে আসে, কণ্ঠে আটকে যায় পাথরখণ্ড, কিভাবে বলবে তোমার বাবা আর নেই বাপ।
দেওয়ালের এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন ফারুকের পিতা আব্দুল দুলাল। তার চোখে মুখে রাজ্যের হতাশা। সংসারের একমাত্র উর্পাজনকারী সন্তানের মৃত্যুতে পথে বসে গেল সংসারটা। কিভাবে চলবে তাদের? অভাবের সংসারে ছেলের পাশে দাঁড়াতে শহরে ভ্যানগাড়ি চালান তিনি। লালখান বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ছয় জনের সংসার ছিল ফারুকের।
চট্টগ্রাম মহানগরীর শুলকবহর এলাকায় শাহজালাল ফার্নিচার নামে একটি দোকানে কাজ করতেন ফারুক। ৮ বছর ধরে ফার্নিচারের দোকানে চাকরি করছিলেন ফারুক। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তিনটার দিকে কর্মস্থলের পাশে মুরাদপুর এলাকার একটি হোটেলে দুপুরের খাবার শেষে রাস্তা পার হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয় ফারুক। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের কতর্ব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষে চট্টগ্রাম কলেজ ও ওমর গনি এমইএস কলেজের দুই শির্ক্ষাথীসহ তিনজন নিহত হয়েছে।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ