চট্টগ্রাম সোমবার, ০৮ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১৮ সেপ্টেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ জুলাই, ২০২৪ | ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতিপূর্বেও চারবার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে সম্মেলন করা যায়নি। এবারও ঘোষিত তারিখে সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় নগরের দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন।

 

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যেই ইউনিট ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অসমাপ্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত করতে হবে। ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করতে হবে। সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য থানাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যদি সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে ওই কমিটিগুলো বাতিল হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে তৃণমূল স্তরে নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। তাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন নেতা যদি ব্যর্থ হন তার যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর নেতৃত্ব যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, দক্ষতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দলীয় আদর্শের প্রতি আনুগত্য ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, নেতৃত্ব ও পদ-পদবিতে কোন অবাঞ্চিত ও জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ কোন ব্যক্তি যাতে আসীন হতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।

 

গত ২০ জুন নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলনের প্রক্রিয়া নিয়ে বাদ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। গতকাল আ জ ম নাছির ও ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল ফের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সম্মেলনকে ঘিরে পুরোনো কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠক সূত্র জানায়, ‘নগরের কয়েকটি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কমিটি নিয়ে তৃণমূলের আপত্তি রয়েছে। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রের কাছে জানিয়েছি। এসব সমস্যা সমধানের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

 

সভায় উপস্থিত সূত্র জানায়, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্যে ক্ষুদ্র প্রতিক্রিয়া জানান সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। এতে সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি বেশি দূর এগোয়নি। বাবুল এ সময় আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘লিডার, ল্যাং মারার অভ্যাস নেই। কাউকে ল্যাং মারতে চাই না। কেউ ল্যাং মেরে ফেলে দিতে চাইলে তাকে থামানোর চেষ্টা করি।’ এ সময় আরও কয়েকজন নেতা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করলে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন তাদের থামিয়ে দিয়ে নিজেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

 

দলীয় সূত্র জানায়, থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকেই ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলনের বিষয়ে সংকটের কথা তুলে ধরেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই নেতা বলেন, ‘হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে দিলে কখনো সম্ভব নয়। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও তৃণমূল সম্মেলন করতে গিয়ে সেই দশায় ভুগছেন। দুই গ্রুপের সমন্বয় করে ইউনিট ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ দুই পক্ষের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের রূপরেখা ঠিক করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

 

২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে ভারমুক্ত করে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 

সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি কেন্দ্রের নিদের্শনা অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম ও বিষয়ভিত্তিক ইস্যুতে সবসময় রাজপথে ছিল। বর্তমান নেতৃত্ব অবশ্যই কর্মীবান্ধব হিসেবে সকলের আস্থা অর্জন করেছে। এই আস্থা ও বিশ্বাসকে অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।

 

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমাদের মধ্যে অবশ্যই নেতৃত্ব ও পদ-পদবির জন্য প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের মতো একটি বিশাল সংগঠনে এই প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার মত কোন ঘটনা বা আচরণ যাতে না হয় সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

দলীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা, ১৮ ডিসেম্বর তৃতীয় দফা এবং ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই চতুর্থ দফা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। চারবারই সম্মেলন পিছিয়ে গিয়েছিল।

 

সভায় বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন, সফর আলী, শেখ মাহমুদ ইসহাক, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সৈয়দ হাসান মাহমুদ সমশের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মানষ রক্ষিত, জুবাইরা নার্গিস খান, নির্বাহী সদস্য আবুল মুনসুর, নুরুল আবছার মিয়া, সৈয়দ আমিনুল হক, পেয়ার মোহাম্মদ, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কিষান চৌধুরী প্রমুখ।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট