চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৪ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য ও জাহাজ হ্যান্ডলিং

বড় জাহাজে পণ্য পরিবহনের সুফল মিলছে চট্টগ্রাম বন্দরে

সারোয়ার আহমদ

২ জুলাই, ২০২৪ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বড় জাহাজে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের সুফল পেতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। যা সচিত্রে উঠে এসেছে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিসংখ্যানে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। যা এর আগের অর্থবছর (২০২২-২০২৩) ছিল ৩০ লাখ ০৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউস। অর্থাৎ সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৩১৫ টিইইউস বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। যার মাধ্যমে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

 

অন্যদিকে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) কার্গো বা খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। যা এর আগের অর্থবছর (২০২২-২০২৩) ছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন কার্গো বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। যার মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে এবার প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

এদিকে, বড় জাহাজে একবারে বেশি পরিমাণে পণ্য নিয়ে আসতে পারায় বিদেশি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা কমেছে। বড় জাহাজে বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি রপ্তানি হলে পণ্য পরিবহনের খরচ কম হওয়ার সুবিধা মেলে। তবে জাহাজ আসা-যাওয়ার সংখ্যা গণনায় প্রভাব ফেলে। যা লক্ষ্য করা গেছে বিদায়ী অর্থবছরের পরিসংখ্যানে।

 

সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়ার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৭১টি। অথচ এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৫৩ টি। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) তার আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) তুলনায় ২৮২ টি জাহাজ কম আসা-যাওয়া করেছে। ফলে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

পণ্য হ্যান্ডলিং ও জাহাজ আসা-যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে আগের চেয়ে বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে। বড় জাহাজে একসঙ্গে বেশি পণ্য ও কনটেইনার পরিবহন করা যায়। তার সুফল আমরা পাচ্ছি। এতে জাহাজের সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। তবে আমরা চাই বড় জাহাজে বেশি পণ্য পরিবহনের সুযোগ আরো বাড়–ক। এতে জাহাজ ভাড়া কম পড়বে, আমদানি ও রপ্তানিকারকরা তথা দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

 

তিনি আরো বলেন, বড় জাহাজে বেশি পণ্য আসার পাশপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিক হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন, অটোমেশন, অভিজ্ঞতা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।

 

এদিকে জাহাজ আসা-যাওয়া কমার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বিগত অর্থবছরে তার আগের সময়ের তুলনায় ২৮২ টি জাহাজ কমেছে। তার পরেও কার্গো ও কনটেইনার পণ্য পরিবহনের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। যদি জাহাজ সংখ্যা না কমতো তবে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ হতো দুই ডিজিটের। কিন্তু সম্প্রতি ফ্ল্যাগ প্রোটেকশন এক্ট এর কারণে গত অর্থবছরে কিছু জাহাজ আসা যাওয়ার উপর প্রভাব পড়েছে। এমনকি দুই/তিনটি শিপিং কোম্পানি তাদের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের রুট থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। তাই চট্টগ্রাম বন্দর ও সরকারকে দেশের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়ার সংখ্যা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে বন্দর ও দেশেরই লাভ হবে।

 

উল্লেখ্য, সমুদ্রপথে দেশের কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ হয় এই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কনটেইনারবাহী জাহাজ ও খোলা পণ্যবাহী বাল্ক কার্গো এ দুই ধরনের জাহাজে করে আসা-যাওয়া পণ্য ওঠা-নামার ভিত্তিতে বন্দরের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়। সিমেন্ট, ইস্পাতসহ খাদ্যশস্য ও সাধারণ পণ্য আমদানি হয় বাল্ক কার্গো বা খোলা পণ্যবাহী জাহাজে। অন্যদিকে শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি হয় কনটেইনারে করে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট