চট্টগ্রাম রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

সর্বশেষ:

লাইন আছে-বিল আসে, তিন যুগেও মেলেনি ওয়াসার পানি

দক্ষিণ খুলশী আবাসিক

মোহাম্মদ আলী

২৭ জুন, ২০২৪ | ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর দক্ষিণ খুলশী আবাসিকে তিন যুগেও মিলেনি ওয়াসার পানি। কিছু এলাকায় ওয়াসার লাইন থাকলেও তাতে পাওয়া যায় না পানি। এখানে অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে ওয়াসার লাইন। বাসিন্দাদের পানির জন্য একমাত্র ভরসা গভীর নলকূপই।

 

নগরীর অভিজাত এ আবাসিকে যোগাযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলক ভাল থাকলেও ওয়াসার পানি সরবরাহ নেই। অথচ এ আবাসিকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি অসংখ্য ভিভিআইপি’র বসবাস। এম এ লতিফ এমপি, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, সিডিএ’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছসহ অসংখ্য রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বসতি গড়েছেন এ আবাসিকে। কিন্তু নাগরিক সুবিধা নেই তেমন একটা। যুগের পর যুগ ধরে এ আবাসিকে পানির হাহাকার চলে আসলেও আজ অবধি সমাধান করা যায়নি।

 

৮০ দশকের শেষের দিকে আনুমানিক ১৯৯০ সালে পাহাড়, টিলা, উঁচু-নিচু জায়গার উপর দক্ষিণ খুলশী আবাসিকের গোড়া পত্তন হয়। দীর্ঘ তিন যুগে তিলে তিলে গড়ে উঠে বসতি। প্রথম দিকে দুই থেকে তিনতলার ভবন তৈরি হলেও পরে নির্মাণ হতে থাকে বহুতল ভবন। বর্তমানে এ আবাসিকের ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ নামে তিনটি ব্লক রয়েছে। এই তিন ব্লকে ভবন রয়েছে প্রায় তিনশ’ এবং বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট আছে প্রায় এক হাজার। সবমিলে পুরো আবাসিকে বাসিন্দা হবে আনুমানিক ১০ হাজার। আবাসিকের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘দক্ষিণ খুলশী আবাসিক কল্যাণ সমিতি’। কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ আবাসিকে ২০ থেকে ২৫ বছর আগে কিছু বাড়িতে ওয়াসার লাইন দেওয়া হয়। কিন্তু কোন লাইনে ওয়াসার পানি নেই। অথচ গ্রাহকদের কাছে বিল পাঠায় ওয়াসা। ওয়াসার পানি না পেয়ে এখানকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করে। তাছাড়া এখানকার পানি সংকট নিরসনে এ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। তিনি ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ সাহেবকে এলাকায় নিয়ে আসেন। এমডি সাহেব খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষিণ খুলশীতে ওয়াসার পানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন।’

 

আবাসিকের বাসিন্দারা জানান, দক্ষিণ খুলশী আবাসিকের অধিকাংশ এলাকায় নেই ওয়াসার লাইন। যেসব এলাকায় ওয়াসার লাইন রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা পানি পায় না। বাধ্য হয়ে তারা গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করছে। এ সুযোগে অনেকে নভীর নলকূপ বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পানি সরবরাহ দিচ্ছে। দক্ষিণ খুলশী জামে মসজিদ ও দারুল নাজাত হেফজখানার আশেপাশের এলাকায় ওয়াসার লাইন থাকলেও পানির চাপ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা ৪ থেকে ৫টি বাড়ির মালিক যৌথভাবে একটি গভীর নলকূপ বসিয়ে এক সাথে ব্যবহার করছেন। আবার কিছু কিছু এলাকায় ওয়াসার লাইন থাকলেও কোন পানি মিলে না। এসব গ্রাহকদের ওয়াসা মিনিমাম বিল দিচ্ছে বছরের পর বছর।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী (মড-২) সাজিব বড়–য়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘পাহাড়ি উঁচু জায়গা হওয়ায় নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে সহজে পানি সরবরাহ দিতে পারে না ওয়াসা। এ কারণে রেলওয়ের কাছে আবেদন করে ৫০০ বর্গফুটের একটি জায়গা নিজ নেওয়া হয়েছে। এ জায়গায় বুস্টিং স্টেশন বসিয়ে এ আবাসিকে পানি সরবরাহ করা হবে। তবে এটি করতেও এক বছর থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে।’

 

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বুস্টিং স্টেশন নির্মাণ করে এ আবাসিকে পানি সরবরাহ করা হবে। তাছাড়া নগরীতে যেসব এলাকায় ওয়াসার পানি নেই সেসব এলাকায় পানি সরবরাহ দিতে একটি মেগা প্রকল্প নিয়েছে ওয়াসা। এটি এখন একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ খুলশী আবাসিকের পানি সমস্যা পুরোপুরি ঘুচে যাবে।’

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট