চট্টগ্রাম রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বপ্ন নারীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামের

হুমায়ুন কবির কিরণ

২৭ জুন, ২০২৪ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) প্রশিক্ষণ মাঠে টার্ফ বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিজেকেএস গত ২২ মে এই টার্ফ বসানোর কাজের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডার আহŸান করেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এরইমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।

 

কাজ শুরুর এই সংবাদ নারী ক্রীড়ামহলে খুশির জোয়ার বয়ে এনেছে। কারণ সিজেকেএস’র এই টার্ফ সূচিতে বড় অংশই রয়েছে নারীদের খেলাধুলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ মাঠে দুটি টার্ফ স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ২০ হাজার বর্গফুটের মূল টার্ফটি শুধুমাত্র নারীদের জন্য এবং ৬ হাজার ৪৫০ স্কয়ার ফুটের টার্ফ ব্যবহার করা হবে বিভিন্ন খেলাধুলায়। থাকবে কর্পোরেট আয়োজনও।

 

সিজেকেএস সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামানের একান্ত ইচ্ছাতেই নারীদের জন্য আলাদা এই টার্ফ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে সিজেকেএস সভাপতির দৃষ্টি আরও বিস্তৃত। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, এই ছোট পরিসরে প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্ট আয়োজন সম্ভব নয়। তবে এখন যেভাবে ধূলিময় অবস্থায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সারাদিন শিশু-কিশোর-তরুণরা দৌড়ঝাঁপ করছে সেটা কাম্য নয়। আমরা চাই পরিকল্পিতভাবে খেলাধুলা আয়োজন করতে।

 

তিনি বলেন, স্বল্প পরিসরে হলেও টার্ফে মেয়েরা নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারবে। যেকোন পর্যায়ে দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে এই টার্ফে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালাতে পারবে সিজেকেএস। তবে আমি চাই মেয়েদের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি স্টেডিয়াম, ভেন্যু। এজন্য আমাদের প্রয়োজন ৩ থেকে ৪ একর জায়গা। শুরুর দিকে জঙ্গল সলিমপুর এলাকা ঘিরে জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা ছিল। তবে এখন আমাদের দৃষ্টি বাকলিয়ার দিকে।

 

তিনি আরও বলেন, সেখানে দখলদাররা বেশ কিছু জায়গা অবৈধভাবে নিজেদের দখলে রেখেছে। জেলা প্রশাসন চাইছে অবৈধ দখলে থাকা জায়গাগুলো উদ্ধার করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সেখানেই চট্টগ্রামে নারীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি ভেন্যু করতে চাই। আশা করছি সে কাজটা আমরা দ্রুতই করতে পারবো।

 

জেলা প্রশাসক যোগ করেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নিজের অবস্থান থেকে নগরবাসীকে ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছি। কাজীর দেউড়িস্থ আউটার স্টেডিয়ামে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় সফল জেলা প্রশাসন। সেখানে এখন সবুজের চাদর। দ্রুতই খেলাধুলার নান্দনিক পরিবেশ পাবে চট্টগ্রামের খেলাধুলায় ইতিহাসে ঠাঁই করে নেয়া আউটার স্টেডিয়াম। একইসাথে শুরু থেকেই আমার স্বপ্ন নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য পৃথক ভেন্যু। আপাতত প্রশিক্ষণ মাঠের টার্ফে নারীদের খেলাধুলা চলবে। এবার দৃষ্টি বৃহৎ পরিসরে, পূর্ণাঙ্গ ভেন্যুতে। সবচেয়ে বড় কথা, অলীক কল্পনা নয়, আমি সেই স্বপ্নটিই দেখতে চাই যেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

 

উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে নারীদের অবদানের গুরুত্ব তুলে ধরে জেলা প্রশাসক বলেন, সভা-সমাবেশ করে ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে যতটা অবদান রাখা যাবে, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে যেকোন ইভেন্টে একটি পদক। আমাদের সেই কাজটিই করতে হবে। মেয়েরা যাতে নিশ্চিন্তে খেলতে পারে, উন্নয়নে নিজেদের সঁপে দিতে পারে, সেই ক্ষেত্রটা আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। জেলা প্রশাসক হিসেবে নারী খেলাধুলাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আমি সে কাজটিই করতে চাই।

 

প্রসঙ্গত, নারী ক্রীড়ার সুযোগ সুবিধায় অনেকটাই পিছিয়ে চট্টগ্রাম। নগরীর সাগরিকায় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থাকলেও সেটি শহরের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় নারী ক্রীড়াবিদ অনেকের জন্যই সমস্যা হয়। এটাও সত্য, সেখানে সারাবছরই নারীদের বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজিত হয়। তবে জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনামতো বাকলিয়ায় নারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম চট্টগ্রামের খেলাধুলার দৃশ্যপটই পাল্টে দেবে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট