চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৪ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

সম্মেলনকে ঘিরে চাঙ্গা পুরোনো বিরোধ

নগর আওয়ামী লীগ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৭ জুন, ২০২৪ | ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে পুরোনো বিরোধ নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে। আগামী অক্টোবর মাসে সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে অসমাপ্ত বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরমধ্যে তৃণমূল সম্মেলন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সাবেক ও বর্তমান মেয়র সম্মেলন প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধে জড়ান।

 

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মতে, নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের লক্ষ্যে তৃণমূল সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিবাদমান দুই গ্রুপ একাধিকবার বৈঠক করে সম্মেলনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দুপক্ষের দুই শীর্ষ নেতা বিবাদে জড়ান। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানেও দুপক্ষ শোডাউন করে শক্তি প্রদর্শন করেছে। এ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের পুরোনো কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

 

২০ জুন নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী তৃণমূল সম্মেলনের প্রক্রিয়া নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

 

সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, তৃণমূলের সম্মেলনে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা সুযোগ পাননি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে থাকা রাজপথের নেতা ও ছাত্রনেতাদের সংগঠনে আনতে হবে। একই সঙ্গে গঠিত বিভিন্ন ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন এবং সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

 

এরপর বক্তব্য দিতে উঠে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, ‘আমি নেত্রীর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করছি। আপনি তো এত দিন সভায় আসেননি। কেন্দ্র থেকে জুলাইয়ের মধ্যে তৃণমূলের কমিটি শেষ করতে বলা হয়েছে।’

 

সাবেক ও বর্তমান দুই মেয়রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও বিতণ্ডার পর সভায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘তিনি (মেয়র রেজাউল করিম) ঢালাও অভিযোগ করেছেন। ভিত্তিহীন অভিযোগ কেন করেছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। কারণ তিনি তো নিয়মিত সভায় আসেন না। কালভদ্রে আসেন।’

 

সম্মেলনের বিষয়ে নাছির বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে আমরা সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছি। অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করেই নগর সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্র।’

 

এ বিষয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সম্মেলন অবশ্যই করতে হবে। সম্মেলন না হলে দল শক্তিশালী হয় না। সাংগঠনিক প্রক্রিয়াগত ভুল সংশোধন করে সঠিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলনের কথা বলেছি। সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন নিয়ে কথা বললে কেউ গোস্বা-বেজার হলে আমার করার কিছুই নেই।’

 

তিনি আরও বলেন, আমি সম্মেলনের বিপক্ষে নই। আমি কিছু সাংগঠনিক প্রশ্ন তুলেছি। কমিটিতে যাতে যোগ্য নেতৃত্বের কথা বলেছি। একপক্ষীয় কমিটি না হয় সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের স্থান দিতে বলেছি।’

 

২০২২ সাল থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তিন দফায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই চার দফায় নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দলীয় কোন্দল ও তৃণমূল সম্মেলন প্রক্রিয়া নিয়ে পক্ষপাতিত্বে অভিযোগসহ নানা কারণে সম্মেলন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।

 

নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় সংগঠন। নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু অক্টোবরের মধ্যে নগর সম্মেলন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে অসমাপ্ত ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানা সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নেতারা ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।’

 

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ দুভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে রয়েছেন দলের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক মেয়র ও সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে মাঠে সক্রিয় মহিউদ্দিনের অনুসারীরা। অপর পক্ষে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

 

নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হলেই দুপক্ষের কোন্দল চাঙা হয়। গত বছর সম্মেলনের লক্ষ্যে ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ করেছিল মহিউদ্দিন অনুসারীরা। শেষে দুপক্ষকে ঢাকায় নিয়ে যান দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিরোধ মীমাংসা হলেও সম্মেলনকে ঘিরে ফের নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে পুরোনো বিরোধ।

 

দলীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শুরু হয়। ১৩২টি ইউনিটের মধ্যে ১০৫টি, ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি এবং ১৫ থানার মধ্যে একটি থানা সম্মেলন করা হয়েছে। এখনও ২৭টি ইউনিট ও ২৯টি ওয়ার্ড এবং ১৪টি থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। অসমাপ্ত সম্মেলন করার জন্য একাধিকবার বৈঠক করেছেন দুপক্ষ।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট