চট্টগ্রাম সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪

চাহিদা বেশি ছোট গরুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ জুন, ২০২৪ | ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পশুর হাটগুলোতে এখনও জমজমাট বেচা-কেনা শুরু হয়নি। তবে আজ শনিবার থেকে কোরবানির পশু কিনতে ক্রেতাদের ঢল নামতে পারে বলে আশা করছেন ব্যাপারীরা। গতবছরের চেয়ে এবার গরুর দাম বেশি। তাই ছোট গরুর দিকেই ঝুঁকছেন ক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার নগরীর বড় তিন পশুর হাট সাগরিকা, বিবিরহাট ও নুর নগর হাউজিং ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

 

কোরবানির দু’দিন আগেও জমেনি বিবিরহাট

দিন দুয়েক পরেই কোরবানির ঈদ। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন হাটে জমজমাট পশু কেনাবেচা হলেও ক্রেতা কম নগরীর বিবিরহাট বাজারে। তুলনামূলক কম বিক্রি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বাজারে গরু এনে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও ব্যাপারীরা।

 

গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিবিরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি বাঁধা গরু। ক্রেতার অপেক্ষায় অলস বসে আছেন অধিকাংশ বিক্রেতা। চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২১টি গরু নিয়ে আসা মো. বাদশা মিয়া বলেন, আমরা আসছি ৫-৬ দিন হয়ে যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত অর্ধেক গরুও বিক্রি করতে পারিনি। ক্রেতাও কম। যদি গরু ফেরত নিতে হয়, তাহলে আরও লোকসানে পড়বো।

 

বিবিরহাট বাজারে সবচেয়ে বেশি গরু এনেছেন চাপাইনবাবগঞ্জের ব্যাপারীরা। তবে চাপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, পাবনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গরু এসেছে বিবিরহাট বাজারে। ঝিনাইদহ থেকে ৭টি গরু নিয়ে আসা মো. পারভেজ বলেন, প্রথম কয়েকদিনে আমার ৫টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু এখন শেষের দুটো নিয়ে বসে আছি, ক্রেতা কম। দামও অনেক কমে গেছে।

 

ক্রেতারা বলছেন, এবার হাটে গরু তুলনামূলক বেশি, দাম একটু বাড়তি হলেও এখন কমতির দিকে। এদিন নগরীর চকবাজার এলাকা থেকে ছেলেকে নিয়ে কোরবানির গরু কিনতে এসে আকবর হোসেন বলেন, ভেবেছিলাম হাটে ভিড় থাকবে। কিন্তু এখানে এসে দেখি মানুষ কম। গরু তো প্রচুর দেখা যাচ্ছে। গতবার আরেকটু কম ছিল। তবে এবার এতদিন দাম চড়া থাকলেও গত কয়েকদিনে অনেক কমেছে।

 

মো. ইউছুপ আলী নামের আরেক ব্যাপারী বলেন, আমার ১৪টি গরু ছিল, সব ছোট আর মাঝারি আকারের। বেশিরভাগ ক্রেতাই মাঝারি আকারের গরু কিনছে, আমার অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে।

 

‘লাখ টাকা’র নিচে গরু নেই নুর নগরে

স্কুলপড়ুয়া ছেলে সালেহ তানভীরকে নিয়ে কর্ণফুলী পশুর বাজারে কোরবানির গরু কিনতে এসেছেন বাকলিয়ার বাসিন্দা আবদুস সোবহান। তবে গরুর দাম শুনেই হতাশ এই মোটরপার্টস ব্যবসায়ী। এর বড় কারণ- যে গরুই তিনি পছন্দ করছেন তার দাম লাখ টাকার বেশি চাইছেন গরু ব্যাপারীরা।

 

শুক্রবার বিকেলে নগরীর নুর নগর হাউজিং এলাকায় কর্ণফুলী পশুর বাজারে কথা হয় সোবহানের সঙ্গে। তিনি জানান, গতবছর যে গরুর দাম ৮০-৮৫ হাজার টাকা ছিল, এবার তা ১ লাখ ১০-২০ হাজার টাকা চাচ্ছেন ব্যাপারীরা। বছরের ব্যবধানে একেকটি গরুর দাম এভাবে বাড়লে মানুষ কোরবানির পশু কিনবে কীভাবে?

 

গরুর বাড়তি দাম নিয়ে অভিযোগ করলেন রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা ছগির আহমদও। শুক্রবার গরু কিনতে এসে ক্ষুব্ধ ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি জানান, দুই মণ ওজনের একটি গরু কীভাবে লাখ টাকার বেশি হয়? গরু ব্যাপারীদের কথা শুনে মনে হচ্ছে গরুর রশি ধরলেই তাদের লাখ টাকা দিয়ে দিতে হবে।

 

ছগিরের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন গরু ব্যাপারী মনজুর মোরশেদ। সোবহান ও ছগিরের অভিযোগ খণ্ডন করে  কুমিল্লার চান্দিনা থেকে গরু নিয়ে আসা এই ব্যাপারী বলেন, গত এক বছরে গো-খাদ্যের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গরু আনার খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ তো আছেই। সবাই দাম দেখে, খরচ দেখে না।

 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামে যে ১০টি পশুর হাট বসেছে এবার, এর মধ্যে কর্ণফুলী পশুর বাজার একটি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রচুর গরু থাকলেও বিক্রি কম। যারা কিনতে এসেছেন তারা বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুই কিনছেন বেশি।

 

ব্যাপারীরা বলছেন, শহরে যারা কোরবানি দেন, রাখার অসুবিধার কারণে তারা কোরবানির আগেরদিনই পশু কিনেন। সেই হিসেবে আজ শনিবার ও আগামীকাল রবিবার পশুর হাট জমে উঠবে। শুক্রবার যারা এসেছেন, তাদের অধিকাংশ গরু দেখেই ফিরে গেছেন। এ কারণে শুক্রবার বিক্রি কম ছিল।

 

কর্ণফুলী বাজারে সবচেয়ে বড় গরু তুলেছেন যে কজন বিক্রেতা তাদের একজন আনোয়ারার কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ১৭-১৮ মণ ওজনের দুটি গরু এনেছি। দুটির দামই ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা পাঁচ লাখ টাকার বেশি বলছে না। ১০ লাখের গরু কীভাবে ৫ লাখে বিক্রি করবো? এটা কি সম্ভব?

 

মাটিরাঙ্গা থেকে কর্ণফুলী বাজারে একমাত্র গয়াল নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী শফিউল আজম। তিনি জানান, ১২ মণ ওজনের গয়ালটির দাম ৭ লাখ টাকা। এর নাম বাহুবলী। প্রায় ৪ বছর ধরে গয়ালটি লালনপালন করে বিক্রির উপযোগী করে গড়ে তুলেছেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত এর দাম উঠেছে ৫ লাখ টাকা।

 

কর্ণফুলী বাজারে তিন পার্বত্য জেলা, মাগুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ উত্তরবঙ্গ থেকেই বেশি গরু এসেছে। সড়কের পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে বসা এই হাটে গরুর সংখ্যাও প্রচুর। হাটের ইজারার দায়িত্বে থাকা লোকজন জানান, পুরো হাট সিসি ক্যামেরার আওতায় আনাসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুরক্ষায় নানা ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। চসিক সাড়ে ৭ শতাংশ হাসিল নির্ধারণ করলেও তারা নিচ্ছেন ৫ শতাংশ।

পা ফেলার জায়গা নেই সাগরিকায়, বিক্রি কম

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নগরীর সাগরিকা কোরবানির হাটে পশু কিনতে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা প্রকৌশলী মোস্তফা। ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ঘুরেও পছন্দ করতে পারেননি কোরবানির পশু। বের হওয়ার পথেই কথা হয় প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটে প্রচুর গরু থাকলেও মানুষের যে পরিমাণ ভিড়, তাতে স্বচ্ছন্দে পছন্দ করা মুশকিল। তাই এখন চলে যাচ্ছি, ভিড় কমলে আবার আসবো। ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দু’দিন। গতকাল শুক্রবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। এদিন নগরীর সবচেয়ে বড় কোরবানির হাট সাগরিকা গরুর বাজারে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। যেন পা ফেলার জায়গা নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু নিয়ে এলেও বেচা-বিক্রি নিয়ে অনেকটাই হতাশ ব্যাপারীরা। পর্যাপ্ত পশু থাকা সত্তে¡ও এখন পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। পর্যাপ্ত গরুর দেখা মিললেও দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

 

শুক্রবার বিকেলে সাগরিকা গরুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাগরিকা মোড় থেকে শুরু করে মূল হাটের আশপাশ পর্যন্ত সড়কের দু’পাশেও হাট বসেছে। মূল হাট থেকে শুরু করে সবগুলোতেই দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। বেশিরভাগই ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দের গরু খুঁজছেন। ছোট মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি, তবে ক্রেতার তুলনায় বিক্রির সংখ্যা ছিল খুবই কম। ক্রেতাদের অনেকে দরদাম করেই ফিরে যাচ্ছেন।

 

জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, এ বছর মধ্যবিত্তদের জন্য পছন্দমতো গরু পওয়া কঠিন। গতবছরের তুলনায় এবারে গরুপ্রতি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। লাখ টাকার নিচেতো গরুই নেই।

 

তবে ব্যাপারীরা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গরুর দাম বেড়ে গেলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা গরু বিক্রেতা আনোয়ারুল বলেন, নিজের খামারে লালনপালন করা ১৫টি গরু নিয়ে এসেছি এই হাটে। কিন্তু আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ছয় মাস আগে যে দাম ছিল, বর্তমানেও ক্রেতারা একই দাম হাঁকাচ্ছেন। গো-খাদ্যের যে দাম, একটা গরু লালনপালন করতে যে খরচ, তা উঠতেও কষ্ট হয়ে যাবে। সময় আরও আছে, শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট