চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাতুনগঞ্জে ৭৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ব্যবসায়ী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ জুন, ২০২৪ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে নাজিম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের দাবি, মশলাজাতীয় পণ্য এলাচের ডিও (সরবরাহ আদেশ) স্লিপ বিক্রি করে পণ্য সরবরাহ কিংবা অর্থ ফেরত না দিয়ে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর ৭৫ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি।

 

 

এ নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন চললেও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে খাতুনগঞ্জে। বিশ্বাস ও আস্থা নির্ভর ব্যবসা পদ্ধতিতেও চিড় ধরতে শুরু করেছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতারণার শিকার একাধিক ভুক্তভোগী পূর্বকোণকে জানান, গেল ৭-৮ মাস ধরে খাতুনগঞ্জের সোনামিয়া মার্কেটের শেষপ্রান্তে ছোট্ট একটি কক্ষে মেসার্স নূর ট্রেডিং নামক ট্রেডিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাচসহ বিভিন্ন পণ্যের ডিও ব্যবসা করে আসছেন নাজিম। কোরবানির ঈদ ঘিরে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বাকিতে মসলাজাতীয় পণ্য কিনেন নাজিম উদ্দিন। পরে খুচরা ও পাইকারি বাজারে তা বিক্রি করে টাকা নগদ করে নেন তিনি। তবে ৪ জুন থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় ব্যবসায়ীদের সন্দেহ বেড়ে যায়। সাধারণত ডিও ব্যবসায় ক্রেতাকে পণ্যের স্লিপ ও নিরাপত্তার জন্য পণ্যমূল্যের সমপরিমাণ অর্থের চেক দেওয়া হয়।

 

 

 

এরমধ্যে পণ্য না পেয়ে ক্রেতারা ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে নাজিমের ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চেক প্রত্যাখ্যান হয়। পরদিন ৫ জুন ৫ কোটি টাকার এলাচ বিক্রি (ডিও স্লিপ) করে কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই অর্থ বোন জামাই টিপুর একাউন্টে স্থানান্তর করেন নাজিম। এতে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। বিষয়টি খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের নেতাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী নেতারা অভিযুক্ত নাজিমকে এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখেন। ৫ জুন সন্ধ্যা থেকে সারারাত আটক রাখার পরদিন বোন জামাই টিপু হাজির হয়ে এসোসিয়েশনের নামে ১০ কোটি টাকার একটি চেক দিয়ে নিজ জিম্মায় নাজিমকে ছাড়িয়ে নেন। পরে ওই চেকও প্রত্যাখ্যান হয়।

 

 

বদিউল আলম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, আমি ২ টন এলাচির ডিও বাবদ ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার মতো অসংখ্য মানুষ নূর ট্রেডিংয়ের এলাচি কিনেছেন। এমনকি আমার শ্যালকও তিন টন এলাচির টাকা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বেশ বড় অংকের টাকা। তবে ভুক্তভোগীদের প্রকৃত সংখ্যা আমি জানি না। যারা তাকে আটক রেখেছিলেন, তারা আমাদের কিছু বলছেন না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, মঙ্গলবার বা বুধবার এটা সমাধানের জন্য বসবে সবাই।

 

 

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, নাজিম উদ্দিন নামের ওই ব্যবসায়ী ৭৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। এই ঘটনায় অনেকেই পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। ডিও ব্যবসার পুরোটাই অবৈধ, এটার মাধ্যমে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন ও মানুষ প্রতারিত হচ্ছে বার বার।’

 

 

ভুক্তভোগী একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, বিষয়টি সমাধানে ৫ জুন অভিযুক্ত নাজিমকে ডেকে নিয়েছিলেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের পরিচালক আলমগীর পারভেজ। তবে অভিযুক্ত নাজিমকে ডেকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। অন্যদিকে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট