নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন মোস্তফা আকবর চৌধুরী নামের এক যুবক। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতেন অসহায় মানুষের জন্য। ধর্মীয় লেবাস দেখে অনেকেই ভাবতেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজের সুবাদে সখ্যতা গড়ে ওঠে শহরের কয়েকটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সঙ্গে। সেই সখ্যতা কাজে লাগিয়ে শতাধিক সরলমনা মানুষকে বিনিয়োগের প্রলোভনে ফেলে চার কোটি টাকার বেশি অর্থ সংগ্রহ করেন। একপর্যায়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এমনই অভিযোগ শতাধিক লোকের।
ভুক্তভোগীরা জানান, শুরুতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে চান্দগাঁও এলাকায় এগ্রোহাট নামের একটি সুপারশপসহ বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় নিজের ব্যবসায় বিনিয়োগের অনুরোধ জানান তাদের। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য লভ্যাংশ ভাগাভাগির আশ্বাস দিয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তিও করেন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। শুরুতে কয়েকজনকে ফুসলিয়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো নেন। প্রথম দেড় বছর প্রতি এক লাখ টাকার বিপরীতে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা হারে লভ্যাংশও দেন বিনিয়োগকারীদের। লভ্যাংশ ভাগাভাগির বিষয়টি সামনে আসায় আরও বিশ্বস্ততা তৈরি হয়। সেটি কাজে লাগিয়ে পুরনো বিনিয়োগকারীদের ফুসলিয়ে একেকজনের কাছ থেকে আরও ৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করেন।
এর মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোক্তা মেলায় স্পন্সর করে এবং নতুন নতুন মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগের নামে আরও অর্থ সংগ্রহ করেন। কিন্তু বছরখানেক আগে ব্যবসায় লোকসানের কথা বলে লভ্যাংশ ভাগাভাগি বন্ধ করে দেন। এতে কয়েক মাস আগে বিনিয়োগকারীরা মূলধন চাইতে গেলে নানা অজুহাত দেওয়া শুরু করেন। ব্যবসায় লোকসানের কথা বললেও বিনিয়োগকারীদের কোন হিসেবে দিতে ব্যর্থ হন।
ভুক্তভোগীদের একজন ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান। তিনি জানান, করোনার সময় থেকে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের ৮০ লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ হিসেবে নিয়েছেন মোস্তফা আকবর। শুরুর কয়েক মাস সময়মতো লভ্যাংশ শেয়ার করলেও গেলো কয়েক মাস ধরে আর লভ্যাংশ দিচ্ছিল না। তাই কয়েকজন টাকা চাইতে গেলে সে জানায় তার কাছে টাকা নেই। তার দাবি সে ব্যবসায় লোকসান করেছে। কিন্তু সব টাকার হিসাবও দিতে পারছে না।
শহরের বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি তাদের গাড়িচালক এবং নিজ দোকানের কর্মচারীর কয়েক লাখ টাকাও আত্মসাৎ করেছে মোস্তফা।
পেশায় নৌ-প্রকৌশলী নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী বলেন, কয়েক দফায় আমার ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে মোস্তফা। এর মধ্যে কিছুদিন আগে একইভাবে ব্যবসার নামে ফের অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। তাতে ব্যর্থ হয়ে বিদেশে পালানোর চেষ্টাও করেছে। তার বাসায় টাকা চাইতে গেলে মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে তার পরিবারের সদস্যরা। এখন সে গা ঢাকা দিয়েছে।
ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি এর আগে একটি বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু সে ধর্মীয় লেবাস ধারণের পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করতো। তাই তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তিন দফায় সে আমার কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে পড়াশোনার জন্য আমার ছেলের বিদেশ যাওয়ার টাকাও রয়েছে। সে যে এমন ভয়ঙ্কর ফাঁদ পেতেছিল বুঝতে পারিনি।
এদিকে, বিনিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ৪ মে তার বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী। ওই মামলায় মোস্তফা বিভিন্ন মৌসুমি পণ্যের ব্যবসার কথা জানিয়ে বিনিয়োগ সংগ্রহের নামে প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক মো. রিদোয়ান। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ, তার সত্যতা পাওয়া গেছে। চান্দগাঁওয়ে যে ভবনে তার দোকান ছিল, সেখানেও শেষের কয়েকমাস ভাড়া বাকি রেখেছে। আমাদের কাছে প্রতিদিন নতুন নতুন ভুক্তভোগী আসছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা আকবর চৌধুরীর সঙ্গে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পূর্বকোণ/মাহমুদ