চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম মহানগর আ. লীগ

সম্মেলনে ঐকমত্যে দুই পক্ষ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৪ মে, ২০২৪ | ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

ইউনিট-ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করে অক্টোবরের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। সম্মেলনের সমন্বয়কারী ১৫ থানার আহ্বায়ক সমন্বয়ে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক করে তৃণমূল সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বৈঠক করে ইউনিট ও ওয়ার্ড শাখার সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে।

 

 

নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘অতীতের ভুল-ভ্রান্তি এবং জাতীয় নির্বাচনে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে নগর আওয়ামী লীগকে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেন সবাই। তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত ও শৃঙ্খলায় ফেরানোর জন্য দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করা হয়। এরপর ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করে থানা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈঠক করে তৃণমূল সম্মেলন তারিখ ঘোষণা করা হবে।’

 

 

গতকাল বৃহস্পতিবার ও গত বুধবার রাতে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সম্মেলনের রূপরেখা নির্ধারণে বৈঠকে বসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে। নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের বাসভবনে বৈঠকে বসেন তারা। কেন্দ্রীয় অনুশাসন মেনে সম্মেলনের বিষয়ে একমতে পৌঁছেন বিবাদমান দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতারা।

 

 

আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের। গত ১২ মে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের রূপরেখা প্রণয়নের নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।

 

 

নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনার পর ইউনিট ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেন। নগরের ১৫ সাংগঠনিক থানার সমন্বয়কারীদের নেতৃত্বে অসমাপ্ত ইউনিট এবং ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করে থানা সম্মেলন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আগামী সপ্তাহে বৈঠক করে অসমাপ্ত ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

 

 

তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে তৃণমূল সম্মেলনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই ১০৫টি ইউনিট, ১৫টি ওয়ার্ড ও একটি থানা শাখার সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সবকটি ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবকটি ওয়ার্ড ও থানা শাখার সম্মেলন করে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে।’

 

 

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অক্টোবর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন তারিখ ঘোষণা করবেন, সেই দিনই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে।’

 

 

বৈঠক সূত্র জানান, তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে অতীতের পক্ষপাতিত্ব ও কমিটি গঠন নিয়ে কোন্দলের কথা তুলে ধরেন। দুই পক্ষের নেতারা পরস্পরকে দায়ী করেছেন। নগর আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ১৩২টি ইউনিটের মধ্যে ১০৫টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে। এছাড়াও ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে। ১৫ থানার মধ্যে একটি থানা সম্মেলন হয়েছে। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অসম্পূর্ণ ইউনিট সম্মেলন শেষ করে দ্রুত ওয়ার্ড সম্মেলন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, নঈম উদ্দিন চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

 

 

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। দীর্ঘদিন ধরে এই ধারা চলে আসছে। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ঘিরে দুইধারায় বিভক্ত। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর এই ধারাটি মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে ঘিরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছে। দুই পক্ষের নেতারা এক টেবিলে বসে সম্মেলনের রূপরেখা তৈরিতে একমত পোষণ করেছেন।

 

 

কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ মে নগরীর কাজির দেউড়ি সেনা কল্যাণ কনভেনশন হলে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। হানিফ বলেছিলেন, ‘এখনো যেসব ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন হয়নি তা জুলাই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাসে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’

 

 

সেই নির্দেশনা মেনে ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করে থানা সম্মেলন এবং নগর সম্মেলনের তোড়জোড় শুরু করেছেন নগর আওয়ামী লীগ। 

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট