চট্টগ্রাম সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ডাকাতি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি খালাস ২৩ কারণে

আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধানে পিবিআই

নাজিম মুহাম্মদ

৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

তেইশ কারণে ডাকাতি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ৪৬টি জেলা ও মেট্রো এলাকার থানায় রুজু হওয়া ২৪৭ ডাকাতি মামলার রায়ে হয়েছে। এসব মামলার রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অনুসন্ধানে কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

পিবিআই’র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, অপরাধ সংগঠনের পর অপরাধীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা এবং তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করার প্রয়োজনীয় সকল সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করে বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করার মতো প্রাথমিক কাজটি পুলিশকে করতে হয়। তাই যে কোন মামলার তদন্তের সফল সমাপ্তি এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত রিপোর্ট মামলার বিচারিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।

যানবাহনে ডাকাতি করার অভিযোগে ২০০৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করা হয়। ৫ মাস ৭ দিন তদন্তের পর ১১ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৫ সালের ৩০ জুলাই আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ১২ বছর পর ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর দেয়া রায়ে ১১ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়ার আদেশ প্রদান করেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞ আদালত বলেন, মামলার ডাকাত সনাক্তকরণ বিষয়ে কোন টিআই প্যারেড না হওয়া, আদালতে উপস্থিত কোন আসামিকে বাদি সনাক্ত করতে না পারা, আদালতে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্ত বিষয়ে সাক্ষী প্রদান না করা,ধৃত ডাকাতদের সাথে সাথে নিকটবর্তী থানায় সোপর্দ না করে স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া, ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় কোন চাক্ষুষ সাক্ষী না থাকা, পক্ষদ্বয়ের মধ্যে রাজনৈতিক পুর্ব বিরোধের অস্তিত্ব থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলো এজাহারে বর্ণিত ডাকাতির ঘটনায় আাসামিদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ সৃষ্টি করে। ২০১৬-১৭ সালে দেয়া ২৪৭টি ডাকাতি মামলার রায়ে ১৯৩২ জন চার্জশিটভুক্ত আসামির মধ্যে ১৭০৫ জন আসামি খালাস পেয়েছেন।

ডাকাতি মামলায় সাজা কম হওয়ার ২৩ কারণ: ডাকাতি মামলার রায়ে বিজ্ঞ আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধান করে ২৩টি কারণ চিহ্নিত করেছেন পিবিআই অনুসন্ধান কমিটি। কারণগুলো হলো-আদালতে সাক্ষীর অনুপস্থিতি,এজাহারকারীসহ কোন সাক্ষীই আদালতে উপস্থিত না হওয়া, সাক্ষীদের সাক্ষ্য গরমিল, বাদিও সাক্ষীগণ আসামিদের কাউকে সনাক্ত করতে ব্যর্থ হওয়া, জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহনের সময় বক্তব্যের গরমিল,বাদি আসামিদের নাম জানার পরও নাম জানার পরও এজাহারে নাম উল্লেখ না করা, বাদি বা সাক্ষীদের কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র সনাক্ত করতে না পারা। সাক্ষ্য প্রদান সম্পর্কিত এসব ত্রুটি ছাড়াও তদন্তেও বেশ কিছু ত্রুটি উঠে এসেছে রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধানে। যেমন, তদন্তকারি কর্মকর্তা আসামিদর টিআই প্যারেড (সনাক্তকরণ মহড়া) না করানো, আসামিদের পিসিপিআর (পুর্বের রেকর্ড) যাছাই না করানো, আসামিদের টিআই প্যারেড করানোর পুর্বেই সাক্ষীদের আসামিকে দেখানো,ঘটনা ঘটার অনেক পরে আসামিদের সাক্ষীদের দিয়ে পুনরায় টিআই প্যারেড সনাক্ত করানো, জব্দ তালিকায় জব্দকৃত আলামত সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না করা এবং এজাহারের সাথে সামঞ্জস্য না থাকা,এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের বয়স ও ধৃত আসামিদের বয়সের পার্থক্য এবং এ বিষয়ে চার্জশিট স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ না থাকা, আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দির সাথে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের গরমিল থাকা , অত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে পরবর্তী সময়ে ডাকাতি মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করায়, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নিজেকে জড়িয়ে বক্তব্য না দেওয়া, আসামীদের টিআই প্যারেড করানোর সময় পুলিশের উপস্থিতি, জবানবন্দি গ্রহণকারি ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতি, টিআই প্যারেড গ্রহণকারি বিচারিক আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতি, অভিযুক্ত আসামিগণ বাদির নিকটতম প্রতিবেশী হওয়া ও বাদির সাথে আসামিদের পূর্বশত্রুতা থাকা অন্যতম কারণ।

পিবিআইয়ের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব কারণের সাথে যুগপৎভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের বেকসুর খালাস প্রদানের আদেশ দিয়েছে। বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে পুলিশ ও প্রসিকিউশন মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করলে ডাকাতি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের হার আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন। ##

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট