চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাজেটে স্ক্র্যাপ জাহাজের অযৌক্তিক দ্বৈত শুল্ক বন্ধের নির্দেশনা চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ মে, ২০২৪ | ১২:০৩ অপরাহ্ণ

আগামী জাতীয় বাজেটে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজে অযৌক্তিক দ্বৈত শুল্ক আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইকেলার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পর জাহাজের জেনারেটর, বিভিন্ন ফিটিংস ও অন্যান্য সকল যন্ত্রপাতিসহ জাহাজের যে ওজন করা হয় তাকে ‘লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ’ বা এলডিটি বলা হয়। সেই এলডিটি হিসেবে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজের প্রতি টনে ১৫শ টাকা করে আমদানি শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করেন শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড মালিকেরা। কিন্তু দেখা যায়, এলডিটি হিসেবে শুল্ক পরিশোধ করার পরেও জাহাজের জেনারেটর ও অন্যান্য ফিটিংসের জন্য আলাদাভাবে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ একবার পুরো জাহাজের ওজনের মধ্যে জেনারেটরসহ অন্যান্য ফিটিংসের শুল্ক দিতে হচ্ছে, আবার পরে জেনারেটর ও অন্যান্য ফিটিংসের আলাদাভাবে শুল্ক দিতে হচ্ছে। এভাবে একই জিনিসের দুইবার শুল্ক পরিশোধ করা বা দ্বৈত কর আদায়ের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমাদানিকারকদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই আগামী বাজেটে এলডিটি শুল্কের বাইরে স্ক্র্যাপ জাহাজের জেনারেটরসহ অন্যান্য ফিটিংসের আলাদা অযৌক্তিক শুল্ক আদায় বন্ধ করার অনুরোধ জানাই এবং বাজেটে এর যথাযথ নির্দেশনা দেখতে চাই।

 

আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ প্রসঙ্গে পূর্বকোণ প্রতিনিধির সঙ্গে ‘বাজেট ভাবনা’ নিয়ে আলোচনায় তিনি এই দাবির কথা জানান।

 

দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ পিএচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, জাহাজ পরিচালনার জন্য জ্বালানি হিসেবে তেল ও লুব অয়েল নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল, ডিজেল অয়েল ইত্যাদি। চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে সাধারণ বিজ্ঞপ্তি (নং-৫৫) জারি করে এসব তেল ও লুব অয়েলের নির্ধারণ করেছিল এবং সেই হিসেবে শুল্ক আদায়ও করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ৫/৬ বছর ধরে কাস্টম কর্তৃপক্ষ ওই সাধারণ বিজ্ঞপ্তি (নং-৫৫) না মেনে স্ক্র্যাপ জাহাজের ব্যবহৃত লুব অয়েলের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ৪০% অবচয় সুবিধা প্রত্যাহার করে ব্যবহৃত লুব অয়েলের জন্য ও ফ্রেশ লুব অয়েলের মত ২ হাজার ডলার (প্রতি টন) হারে ট্যারিফ মূল্য ধার্য করে তার ভিত্তিতে শুল্ক আদায় করছে। বর্তমানে ওই ব্যবহৃত লূুব অয়েলের জন্য বাংলাদেশি টাকায় প্রতি টনের জন্য প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। ফলে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিকারক অর্থাৎ ইয়ার্ড মালিকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উল্লেখ্য, ব্যবহৃত ‘লুব অয়েল ইন ট্যাঙ্ক’ এর রিসেল মূল্য খুবই নগণ্য। এমনকি ওই লুব ওয়েল বিক্রি করে পরিশোধিত শুল্কের টাকাও পাওয়া যায় না। তাই আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে কাস্টমসের ওই সাধারণ বিজ্ঞপ্তিতে (নং-৫৫) (সংশোধন পূর্বাবস্থা) যে ৪০% অবচয় সুবিধা ছিল তা বহাল রেখে শুল্ক নির্ধারণ এবং আদায়ের নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

তিনি আরো বলেন, স্ক্র্যাপ জাহাজের ‘সাম ট্যাঙ্ক’ এ রক্ষিত পোড়া মবিল এক ধরনের বর্জ্য, এবং এর কোন বাজার মূল্য নেই। জাহাজের এ সমস্ত পোড়া মবিল পরিবেশগত কারণে সমুদ্রে ফেলে দেয়া যায় না। কিন্তু ওই পোড়া মবিলের উপরেও ফ্রেশ লুব অয়েলের ন্যায় প্রতি টনে ২ হাজার ডলার ট্যারিফ মূল্যে নির্ধারণ করে তার ভিত্তিতে শুল্ক আদার করা হচ্ছে। যা অত্যন্ত অমানবিক, অযৌক্তিক। পোড়া মবিলের অযৌক্তিক শুল্ক পরিশোধ করতে গিয়ে জাহাজ আমদানিকারকদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই আগামী বাজেটে আর্থিক ক্ষতির বিষয় বিবেচনা করে ‘সাম ট্যাঙ্ক’ এ থাকা পোড়া মবিল এর শুল্ক শতভাগ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাই।

 

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, স্ক্র্যাপ জাহাজের জেনারেটর, এসি, ক্যাবল ইত্যাদি ফিটিংসের জন্য এলডিটি’র ভিত্তিতে একবার শুষ্ক আদায় করা হচ্ছে বিধায় ওই একই জিনিসে জন্য দ্বিতীয়বার শুল্ক আদায়ের অযৌক্তিক নিয়ম বাতিল করা প্রয়োজন। স্ক্র্যাপ জাহাজের অন্যান্য আউটফিটিংস যেমন এসি, জেনারেটর, ক্যাবল ইত্যাদি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ব্যবহার হওয়ার এগুলো স্ক্র্যাপ পর্যায়ে চলে গেছে। এসব পণ্যের পুনঃবিক্রয় মূল্য খুবই নগণ্য বিধায় এগুলোর জন্য ৮০%-৯০% অবচয় সুবিধা প্রদান করে মিনিমাম ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে শুল্ক আদায়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এছাড়া বাহিত পণ্যের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নির্ধারিত মূল্যমানের তালিকা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।

 

তিনি বলেন, এসব দাবি কোন ব্যক্তি বা একক প্রতিষ্ঠানের নয়। দেশের সম্ভাবনাময় ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাত শিপ রিসাইক্লিং সেক্টরের প্রতিটি ইয়ার্ড মালিকের দাবি। কারণ দেশের নির্মান শিল্প, অর্থাৎ ইস্পাত কারখানাগুলোর অধিকাংশই স্ক্র্যাপ জাহাজের উপর নির্ভরশীল। তাই দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে রড প্রয়োজন তার কাঁচামাল হিসেবে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমাদানি সহজ করা ও সহনশীল শুল্ক ব্যবস্থা করা সমগ্র দেশের দাবি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট