চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

কাস্টমস আইন সংশোধন না হলে হয়রানি বাড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ১:০২ অপরাহ্ণ

কাস্টম আইনে মিথ্য ঘোষণায় পণ্য আমদানির জরিমানা আরোপের বিধানটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল বলেছেন, কাস্টমস আইনে মিথ্যা ঘোষণার জন্য ফাঁকিকৃত রাজস্বের সর্বনি¤œ দ্বিগুণ ও সর্বোচ্চ চারগুণ দ- আরোপের বিধান রয়েছে। ছোটখাটো বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ওই শাস্তি বাণিজ্য সহায়ক নাও হতে পারে বিবেচনায় এনবিআর ব্যাখ্যা দেয় যে, ভুলটি অবৈধ অভিপ্রায় না অনবধানতাবশত সেটি বিচারিক প্রজ্ঞায় বিবেচনা করবেন ন্যায় নির্ণয়কারী কর্মকর্তা। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের হয়রানি করার সুযোগ বেড়ে গেছে। ফলে কাস্টমস আইন সংশোধন না হলে হয়রানি বাড়বে। আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ প্রসঙ্গে পূর্বকোণ প্রতিনিধির সঙ্গে ‘বাজেট ভাবনা’ আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

মোহাম্মদ বেলাল আরো বলেন, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ এলাকার বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে সকল বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের আমদানি প্রাপ্যতায় সমতা আনা এবং বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের আমদানি প্রাপ্যতা এককালীন তিন বছরের জন্য জারী করা প্রয়োজন। বন্ডের আওতায় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে মোহাম্মদ বেলাল বলেন, দেশের এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের উৎপাদিত সকল পণ্য সরাসরি রপ্তানিকারক এবং স্থানীয় চাহিদার শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম। তারপরও অনেক সময় বিদেশি ক্রেতার মনোনয়নের কারণে পোশাক খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে পোশাক খাতের পণ্যের উৎপাদন মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে না। অপরদিকে, দেশের এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্রেতার অভাবে সচল থাকছে না।

রপ্তানির সক্ষমতা ধরে রাখাতে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সকল ধরনের ক্রয়কে ভ্যাটমুক্ত রাখার প্রস্তাব দিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান অফিস পরিচালনার জন্য স্টেশনারীসহ বেশ কিছু দ্রব্যসামগ্রী স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয় করে থাকে। যেখানে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য। এ সকল ক্রয় প্রকান্তরে উৎপাদন ও রপ্তানির সাথে সম্পর্কিত।

 

আয়কর বিষয়ক ৩টি প্রস্তাব দিয়ে মোহাম্মদ বেলাল বলেন, রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে ভবিষ্যতে যেহেতু আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের সুযোগ থাকছে না এবং চূড়ান্ত কর দায় নিষ্পত্তির সময় অগ্রিম উৎসে কর সমন্বয় হয়ে থাকে, তাই রপ্তানি খাতের উৎসে আয়কর আগামী ৫ বছরের জন্য শুন্য দশমিক ২৫% এ ধার্য্য করা প্রয়োজন।

 

তিনি আরো বলেন, যদি কোম্পানির ব্যাংকের মাধ্যমে অর্জিত সুদের উপর ২০% এর পরিবর্তে ১০% উৎসে কর ধার্য্য করা হয় তাহলে রপ্তানিতে টিকে থাকার এ বহুমুখী সংকট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। কারণ বর্তমানে টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার সংকট ইত্যাদি কারণে তফসিলি ব্যাংকসমূহে তারল্য সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঞ্চয়ের অর্থ বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। এ সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের অর্জিত ব্যাংক সুদ হতে আয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে সক্ষম হচ্ছে।

 

এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হতে ৪ লক্ষ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব রেখে মোহাম্মদ বেলাল বলেন, একজন করদাতার জীবন যাপনের জন্য বাৎসরিক যে পরিমাণ ন্যূনতম অর্থের প্রয়োজন, সে পরিমাণ অর্থ করমুক্ত থাকলে কর ফাঁকির প্রবণতা হ্রাস পাবে এবং কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিরা অধিক সংখ্যায় কর প্রদানে আগ্রহী হবেন। তাছাড়া ব্যক্তিগত করভার কমলে সঠিক আয় প্রদর্শনে জনগণ উৎসাহিত হবে, যা দেশের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অধিক রাজস্ব আহরণে সহায়ক হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট