চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

জব্বারের বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা

প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পাশাপাশি সৌখিন পণ্যের কদর মেলায়

দাম বেশি হলেও নিজেদের পছন্দের পণ্যটি সংগ্রহ করছেন ক্রেতারা। মেলা ঘুরে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ করছেন ভিডিও

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ দেখায় তাক লেগে যায় চোখে। সারি সারি ঝাড়– স্তূপ করে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে। ছোট বড় নানান আকারের। শুধু আকার নয়, তৈরিতেও রয়েছে বিশেষ কারিশমা। সঙ্গে কুলা, চালুন, বাঁশের তৈরি নানান আকারের ঝুড়ির সমাহার। আন্দরকিল্লার একপ্রান্তজুড়ে দৈনন্দিন ব্যবহার্য এই জিনিসপত্রের বিশাল সম্ভার । মেলার প্রথম দিনেই এসব সামগ্রী ঘিরে ভিড় ছিল নারীদের। তবে শুধু ব্যবহার্য জিনিস নয়।

 

প্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি সৌখিন জিনিসের কদর ছিল ক্রেতাদের মধ্যে। লালদিঘির একপ্রান্তজুড়ে এমনি সৌখিন জিনিসের সম্ভার নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এই যেমন বেতের দোলনাসহ বেত দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, ছোট থেকে বড় সারি সারি স্তূপ করে রাখা বাহারি সব মাটির সামগ্রী। পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন উপকরণ, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টেরাকোটার কাজ। বিচিত্র ধরনের ফুল পাখি, সুন্দর নকশা করা অপূর্ব রঙের মিশ্রণে জুড়িয়ে যায় চোখ।

 

একসময় মাটির তৈরি পাত্র খাবার পরিবেশনে ব্যবহার হলেও যুগের পরিবর্তনে মাটির রকমারি সামগ্রী পছন্দের তালিকায় স্থান পাচ্ছে সৌখিন মানুষদের কাছে। ঘর সাজাতে মাটির তৈরি রকমারি বাহারি জিনিসের বিশাল সমাহার রয়েছে এই মেলায়। পাশাপাশি নজর কাড়ছে কাঠের তৈরি নান্দনিক জিনিসগুলো। কি নেই এখানে?

 

মাটির ওয়াল ম্যাট, ছোট বড় বাহারি টব, নকশা করা আয়না, মুখোশ, টেপা পুতুল, বাহারি ফলের অবয়ব, গ্লাস, বাটি, থালা, নকশাদার পাত্রসহ রকমারি সামগ্রী। আর ঘরসাজাতে এমনি নান্দনিক জিনিসের খোঁজে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বিশেষ করে মহিলা আর তরুণীদের প্রচুর উপস্থিতি মেলাকে ঘিরে। তবে এসব পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। দাম বেশি হলেও খুঁজে খুঁজে নিজেদের পছন্দের পণ্যটি সংগ্রহ করেছেন ক্রেতারা। অনেকে মেলা ঘুরে তুলছেন ছবি আর ভিডিও করছেন।

 

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আয়না ফ্রেম ৩০০ থেকে একটু বেশি কারুকাজের আয়নাগুলো হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলের টব ১শ’-৫শ’ টাকা। ফুলদানি ২শ’ থেকে আকারভেদে হাজার দুইয়ের বেশি টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে, গ্লাস প্রতি পিস ৫০ থেকে আকারভেদে এক হাজার টাকা, বাটি ১শ’- ৩শ’ টাকা, থালা ১শ’- ১৫০ টাকা, জগ ১শ’- ১৫০ টাকা, ওয়াল টব ৮০- ১শ’ টাকায়।

 

কথা হয় মেলায় ঘুরতে আসা একদল কলেজ শিক্ষার্থীর সাথে। চট্টগ্রাম কলেজের এই শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করছেন মাটির বিভিন্ন সামগ্রী। তাদের একজন সুমাইয়া। তিনি জানান, গত কয়েকমাস ধরে টাকা জমিয়েছি শুধু মাটির সামগ্রী কেনার জন্য।

 

সাভার থেকে মেলায় এসেছেন মো. মঈনুদ্দীন। গত ২০ বছর ধরে এই মেলায় নিয়মিত আসেন তিনি। সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এই বলী খেলায় আসার জন্য। একদিকে বংশপরম্পরার ব্যবসা ও অন্যদিকে রুটিরুজির জন্যই আসেন তিনি। আলাপকালে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এমেলা বেশ জমজমাট। বেচাবিক্রিও ভালো হয়। দাদা, বাবা আসতেন মাটির পণ্য নিয়ে। এখন আমিও আসি।

 

মেলায় আরো দেখা যায় হাতেবোনা শীতলপাটি, ছোট ছোট হাতের তৈরি খেলনা, রঙিন হাতপাখা ও ঘর সাজানোর ফুল।

 

প্রমি দাশ বলেন, মেলায় এসে কয়েক রকমের ঠাকুর কিনেছি। তিনটা হাতপাখা কিনেছি। দাম অনেক বেশি। কিছু খাজা মিঠাইও কিনলাম।

 

এদিকে, সিনেমা প্যালেসের পাশেই বরাবরের মতো দেখা পাওয়া গেলো কাঠের আসবাবপত্রের। এখানেও ভিড় ছিল ক্রেতাদের। কেউ টেবিল, কেউ খাট কিনছেন। ক্রেতা রাশেদুল ইসহাক বলেন, চাকরির সুবাদে স্ত্রীকে শহরে নিয়ে এসেছি কয়েক মাস হবে। এতদিন নিচে ঘুমাতাম। আজকে মেলা থেকে ১৫ হাজার টাকায় একটা খাট কিনলাম।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট