চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

অনাদর-অবহেলাই যাদের ললাট লিখন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ এপ্রিল, ২০২৪ | ৪:২৯ অপরাহ্ণ

ধীমান চক্রবর্তী। ১০ বছর বয়সী এই শিশুর রোগা শরীরের দিকে প্রথম তাকাতেই মনে হল পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তার পরনের নোংরা টি-শার্টের বোতামহীন কলারের নিচের ছেঁড়া অংশ দেখে বুঝতে বাকি রইল না-কত অনাদর-অবহেলায় বেড়ে উঠছে সে।  নগরীর প্রবর্তক এলাকার একটি অনাথালয়ে আশ্রয় নেওয়া কক্সবাজারের এই শিশুর সঙ্গে কথা হয় শুক্রবার।
জানা গেল- তিন বছর আগে ক্যান্সারে ধীমানের বাবা মারা যান। এরপরই আঁধার নেমে আসে বাবা-মায়ের ‘কলিজার টুকরা’ ধীমানের জীবনে। আর্থিক দূরাবস্থার কারণে গত বছর তাকে অনাথালয়ে পাঠিয়ে দেন মা। এক বছর ধরে এখন সেটিই ছোট্ট ধীমানের ‘ঠিকানা’। শুধু ধীমান নয়- প্রবর্তক এলাকার ওই অনাথালয়ে বেড়ে উঠছে কয়েকশ এতিম শিশু। যাদের অধিকাংশই ঠিকঠাক খাবার পেলেও বিনোদনের খুব বেশি সুযোগ পায় না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা মেলে বছরে-ছ’মাসে একবার। কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের দেখভাল করলেও বাবা-মায়ের আদর ভালোবাসার চেয়ে তা একেবারে নগন্য। 
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম শহর ও জেলা মিলিয়ে নিবন্ধিত এতিমখানার সংখ্যা ৩১০টি। ২৬৪টি এতিমখানার ৯ হাজার ৯০২ জন শিশু খাদ্য, পোশাক, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতিমাসে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দের আওতায় দুই হাজার  টাকা হারে সরকারি অনুদান পায়। এরমধ্যে খাবারের জন্য ১৬’শ টাকা, পোশাকের জন্য ২’শ টাকা এবং ওষুধ ও অন্যান্য খরচের জন্য পায় আরও ২’শ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য বলে দাবি শিশু অধিকার কর্মীদের। 
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ওয়াহীদুল আলম জানান, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শিশু ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দের আওতায় অনুদান পায়। সেই হিসাবে অনুদানের আওতায় থাকা ২৬৪টি এতিমখানাতেই রয়েছে ২০ হাজারের মতো এতিম শিশু। এর বাইরে অনুদান পায় না এমন আরও ৪৬টি নিবন্ধিত এতিমখানা রয়েছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামেই নিবন্ধিত ৩১০টি এতিমখানায় ২৫ সহ¯্রাধিক এতিম রয়েছে। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিবন্ধিত এতিমখানার প্রায় সমপরিমাণ অনিবন্ধিত এতিমখানা রয়েছে। যেগুলো নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নানা কারণে যারা অনিবন্ধিত এতিমখানায় আশ্রয় নিয়েছে তাদের বেশিরভাগই বড় হচ্ছে অনাদর অবহেলা আর উপযুক্ত শিক্ষা-চিকিৎসার ঘাটতি নিয়ে। নাজুক এমন পরিস্থিতিতে আজ (শনিবার) বিশ্ব এতিম দিবস পালন করছে ডব্লিউওসি নামের একটি সংগঠন। এতিমদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি তাদের।
নিবন্ধিত সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দের আওতায় থাকা এতিমখানাগুলোর শিশুরা কিছুটা স্বাচ্ছন্দে থাকলেও সুবিধাবঞ্চিত অনিবন্ধিত এতিমখানার শিশুরা ভাল নেই। গতকাল (শুক্রবার) নগরীর অক্সিজেন এলাকায় দারুস সালাম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় কথা হয় এতিম শিশু সায়েমুল ইসলাম, জুনায়েদুর  রহমান এবং তাহসীনুর রহমানের সঙ্গে। 
তারা জানায়, ওই মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এতিম শিশু রয়েছে ১৮ জন। তাদের মধ্যে ‘আবাম ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন কয়েকজনের ভরণপোষণ বাবদ মাসে দুই হাজার টাকা হারে দিলেও বাকিদের ভরণপোষণ দেওয়া হয় মাদ্রাসা থেকে। মাদ্রাসার আয় থেকে খাবার ও আবাসনের ব্যবস্থা করা হলেও সময় মতো পুষ্টি চাহিদা পূরণ, বিনোদনের সুযোগ কিংবা যথাযথ চিকিৎসা ও ওষুধ পায় না তারা। 
ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আফসার বলেন, ‘মাদ্রাসার দেড়শ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জন এতিম শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের ভরণপোষণের খরচ বহন করে মাদ্রাসা। অন্য শিক্ষার্থীদের ভর্তির আয় থেকে এতিম শিশুদের খাবার ও আবাসনের ব্যবস্থা হলেও বাকি সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যায় না। বাবা-মায়ের আদার-ভালোবাসা ও নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে বড় হচ্ছে তারা। নগরীর অধিকাংশ মাদ্রাসা ও এতিমখানার চিত্রই এমন বলে জানান তিনি।
এতিমসহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে সরকারের সমাজসেবা মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের এসব এতিম শিশুর অনাদরে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা নিয়ে জানতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট