করোনায় ‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের জন্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সহযোগিতা পেতে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশন করেছেন এক লাখ ৩০ হাজার প্রবাসী। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে ৯ হাজার ৩৪০ প্রবাসী আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন ১২ কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন আরো ১৫ হাজার প্রবাসী।
করোনা মহামারীতে দেশে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এদিকে প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের ৫ হাজারের অধিক প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এরমধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েছেন ৬০০ জন। অবশিষ্টরা পর্যায়ক্রমে সহযোগিতার টাকা পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
তাছাড়া প্রকল্পে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত এক সভা আগামী ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও কল্যাণ) ও যুগ্ম সচিব শোয়াইব আহমাদ খান, প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফাইল ইসলাম।
প্রকল্প সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপকৃত হবে দুই লাখ প্রবাসী। এর আগে সারাদেশ থেকে ৮টি এনজিও সংস্থার মাধ্যমে দুই লাখ প্রবাসীর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলছে। রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রত্যেককে দেওয়া হবে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনকৃত থেকে বাছাইকৃত ২৩ হাজার ৫০০ জনকে দেওয়া হবে কারিগরি সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ। এ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। ৪ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও নানা কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে করোনার কারণে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে রেইস প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০টি জেলায় স্থাপিত ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। করোনার কারণে বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীগণ বিনামূল্যে নিবন্ধন করতে পারবেন। গতকাল ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রকল্পের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন এক লাখ ৩০ হাজার প্রবাসী। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন ৯ হাজার ৩৪০ জন। এছাড়া টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন ১৫ হাজার প্রবাসী।
জানতে চাইলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েলফেয়ার সেন্টার, চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম ভূঞা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রত্যেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা সহযোগিতা ছাড়াও এদের মধ্যে থেকে বাছাইকৃত ২৩ হাজার ৫০০ জনকে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা।
মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা কাজ হারিয়েছেন। তাদের বড় একটি অংশ দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের অনেকেই আর কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি। এসব প্রবাসীর পাশে থাকতেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার।’
মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বিশ্বের ১৭৫টি দেশে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। করোনা মহামারীর কারণে প্রায় ৬ লাখ প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত আসেন। তাদের মধ্যে অনেকে কর্মস্থলে পুনরায় ফিরে যান। কিন্তু কাজ হারিয়ে বিশাল একটি অংশ আর কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি, দেশে থেকে যেতে বাধ্য হন। কাজ হারিয়ে ফেরত আসা এসব প্রবাসী বেকার এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় সরকার তাদের মধ্যে থেকে রেজিস্ট্রেশনকৃত দুই লাখ প্রবাসীকে প্রকল্পের আওতায় নগদ অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।
পূর্বকোণ/এসএ