
সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন নগরীর দামপাড়ার বাসিন্দা মামুন উর রশীদ রিফাত। সরকারি বৃহৎ এ হাসপাতালে ভর্তি হলেও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা না থাকায় একদিন পরই এ যুবককে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু সেখানেও বাঁচানো যায়নি রিফাতকে। গত ৫ এপ্রিল ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের টার্শিয়ারি পর্যায়ের এ হাসপাতালটিতে ভর্তি হন কক্সবাজারের বাসিন্দা মো. ফোরকান। কিন্তু বিশেষায়িত সেবা না থাকায় স্বজনরা ফোরকানকে নিয়ে যান ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি এন্ড অর্থোপেডিক্স রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে। সেখানে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা পেলেও স্বজনদের অবস্থান ও অন্যান্য কারণে আর্থিক ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা।
পোড়া রোগী কিংবা পঙ্গু রোগী নয়, মস্তিষ্কজনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই চট্টগ্রামে। অথচ চমেক হাসপাতালের স্নায়ু রোগের চিকিৎসায় পৃথক ওয়ার্ড রয়েছে। আছেন দক্ষ চিকিৎসকও। কিন্তু যে পরিমাণ রোগী আর অবকাঠামোর সংকট, তাতে অনেকটাই যুদ্ধ করে রোগীদের সেবা দিতে হয় চিকিৎসকদের। এসব কারণে জটিল রোগীদের ছুটে যেতে হয় রাজধানী ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানী ঢাকায় ১৪টি বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে ওঠলেও এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। যার কারণে জটিল চিকিৎসায় মানুষকে এখনো ছুটতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। তাতে করে মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগী-স্বজনকে। আবার যাদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে, তারা পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশেও। এমন বাস্তবতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার দাবি জনগণের।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিভাগ হচ্ছে চট্টগ্রাম। অথচ স্বাস্থ্যসেবায় চট্টগ্রাম অনেকটাই পিছিয়ে। একমাত্র চমেক হাসপাতালের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে পুরো বিভাগের রোগীদের। যা উচিত নয়। এখানে সেবাদানের ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটে। চট্টগ্রামকে অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে। চট্টগ্রামে বিশেষায়িত হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন।
চমেকের সাবেক অধ্যক্ষ ও গবেষক অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস বলেন, চট্টগ্রামের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ক্যানভাস পরিবীক্ষণ ও পর্যালোচনায় অবস্থা সুখকর নয়। সত্যিকারভাবে চট্টগ্রামে কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। সবকিছুই রাজধানী ঢাকাতেই। চিকিৎসা সেবা মানুষের দৌঁড়গোড়ায় পৌঁছাতে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।
সাবেক চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সাবেক মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এখনও চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী বিদেশে পাড়ি দেন। ঢাকায় একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতাল-ইনস্টিটিউট থাকলেও চট্টগ্রামে কিছুই গড়ে ওঠেনি। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছেন, দু-একটির কাজ চলমান। তবে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রয়োজন।
সরকার দেশের সব অঞ্চলে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসার কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে কার্যকর উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা ছাড়া সম্ভব নয়। উপজেলা হাসপাতালগুলোকে আরও বেশি উন্নত করার পাশাপাশি চিকিৎসকদের উপযুক্ত বসবাসের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন। পাশাপাশি চট্টগ্রামেও বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের বিকল্প নেই।
পূর্বকোণ/এসএ