চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

মার্কেটের ক্রেতাও এবার ফুটপাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ৩:০৩ অপরাহ্ণ

লালচে জুতা জোড়া দারুণ পছন্দ হয়েছে আবুল বাশারের। পাশেই দাঁড়ানো বিক্রেতা। তার দাবি শতভাগ চামড়া দিয়ে তৈরি এই জুতা, তাই দামও বেশি। জুতা জোড়ার জন্য গুনতে হবে হাজার টাকা। তবে বিক্রেতার কথায় গলছেন না বাশার, ৪০০ টাকার বেশি দেবেন না তিনি। নানা দর কষাকষির পর ৫০০ টাকায় ওই জুতা কেনেন বাশার। গত বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় নগরীর কোতোয়ালী মোড় এলাকার ফুটপাতে দেখা যায় এমন চিত্র।

আবুল বাশার জানান, প্রতিবছর সাধারণত রিয়াজউদ্দিন বাজার, হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার এলাকার মতো জায়গা থেকে ঈদের কেনাকাটা করতেন। এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অল্প টাকার মধ্যেই তিন সন্তান আর স্ত্রীর জন্য ঈদের কেনাকাটা সারতে চান তিনি। তাই ঠিক করেছেন এবার ফুটপাতের দোকান থেকেই কেনাকাটা করবেন।

 

শুধু কোতোয়ালী এলাকাই নয়, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, অক্সিজেন, আতুরার ডিপু, চকবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, নূপুর মার্কেট, স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় জমজমাট কেনাবেচা চলছে ফুটপাতের ঈদ বাজারে। তবে প্রতিবছর ঈদে নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে জমজমাট কেনাবেচা হলেও এবার ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের কারণে বদলে গেছে চিত্র। ফুটপাতে গড়ে ওঠা এসব দোকানে তুলনামূলক কম মূল্যে পাওয়া যায় ঈদের নতুন জামা-জুতা থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের সামগ্রী। তাই নিম্নআয়ের মানুষই ফুটপাতের এসব দোকানের প্রধান ক্রেতা। তবে নানামুখী অর্থনৈতিক চাপে আবুল বাশারের মতো ‘মার্কেট’র অনেক ক্রেতাও এবার ফুটপাতমুখী।

 

এদিন সন্ধ্যায় নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় ফুটপাতের দোকান থেকে দুই ছেলের জন্য ঈদের নতুন জামা কিনতে আসেন আনুমানিক চল্লিশ বছর বয়সী মৌসুমি আক্তার। তিনি জানান, লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের মধ্যে সন্তানদের জন্য ঈদের জামা কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই কেনাকাটা না করার সিদ্ধান্ত নিলেও সন্তানদের বায়না মেটাতে কম দামে হলেও নতুন জামা কেনার চেষ্টা করছেন। সাধারণত বিভিন্ন বিপণিবিতান ও শপিংমল থেকে ঈদের কেনাকাটা করলেও এবার কম দামের জন্যই মূলত ফুটপাতের দোকানে জামা আর প্যান্ট দেখছেন তিনি। তবে ফুটপাতের ‘কম দাম’ই অনেক বেশি বলে দাবি তার।

 

জনপ্রিয় ও অভিজাত বিপণিবিতানের মতো বেলা ১০টার দিকে অনেকটা একইসময়ে ফুটপাতের দোকানে কেনাবেচা শুরু হয়। দিনের বেলায় ভীড় তুলনামূলক কম থাকলেও রাতে দম ফেলার ফুরসত পান না বিক্রেতারা। ক্রেতাদের ভিড়ের সঙ্গে বিক্রেতাদের হাঁকডাক ও পোষাকের আকর্ষণীয় বর্ণনায় জমে ওঠে বাজার। তবে ফুটপাতে কম টাকায় পণ্য বিক্রির চিরাচরিত ধারণা থাকলেও মানহীন পণ্যে ক্রেতাদের ঠকানোর অভিযোগও রয়েছে বিস্তর।

 

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর অক্সিজেন এলাকায় পোষাক শ্রমিক আয়েশা আক্তার বলেন, আমি প্রতিবছর ছেলে-মেয়েদের জন্য এদিক (ফুটপাত) থেকে কেনাকাটা করি। তবে অনেকসময় ওরা ভালো কাপড় বললেও বাসায় গিয়ে দেখা যায় দু’দিন পরেই ছিঁড়ে যায়। এ রকম অনেকবার হয়েছে। তবে অনেকসময় ভালো কাপড়ও পেয়েছি।

 

তুলনামূলক ব্যয় কম বলেই ভালো পোষাক কম টাকায় বিক্রি করা যায় বলে জানান নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার ফুটপাতের বিক্রেতা রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের তুলনামূলক খরচ কম। দোকান ভাড়া নেই, অন্যান্য খরচও নেই। তাই আমরা একই ড্রেস মার্কেটের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারি। তবে বিভিন্ন সময় পুলিশ সমস্যা করে, উঠিয়ে দেয়।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট