
গত রবিবার রাত ১০টার পর ঈদের কেনাকাটা করতে ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন সোনিয়া আকতার। কিনেছেন থ্রি-পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কেনাকেটা করতে করতে যেন কিছুটা হাঁফিয়ে উঠেন তিনি। নাস্তা করার জন্য একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকেন । কিন্তু বিল হাতে পেয়ে তার চোখ ছানাবড়া। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, পোশাকের চেয়ে খানাপিনায় রীতিমতো গলাকাটা অবস্থা। একইভাবে ক্ষোভ ঝারলেন আরও কয়েকজন ক্রেতা।
দেখা যায়, ঈদ ঘনিয়ে আসায় উৎসবের আমেজে কেনাকাটা করছিলেন সবাই। পছন্দসই পোশাক এবং অন্যান্য জিনিস কিনতে এ-দোকান থেকে ও-দোকান ঘুরেফিরে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কেনাকাটা করছেন তারা। শুধু পোশাক-আশাক নয়, গৃহসজ্জার নানা সামগ্রীও বেচাকেনায় ব্যস্ত রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতারা।
শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় মক্কা-মদীনা বুটিকস হাউস নামে শিশু ও তরুণীদের পোশাকের দুটি দোকান পাশাপাশি। দুটিতেই দেখা গেল ক্রেতাদের ভিড়। ওই দোকানের মালিক আজিজুল হক রাসেল বলেন, ‘এবার ঈদে তরুণীদের আকর্ষণ হচ্ছে আলিয়া কাট আর আফগান। এ দুটি ড্রেস ভালো বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৪ ও ২০ হাজার টাকা দামের রয়েছে।’
ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কেনাকাটার ভরসা হচ্ছে এই শপিং কমপ্লেক্স। পোশাক-আশাক থেকে শুরু থেকে সাজ-সজ্জা ও গৃহসজ্জার সামগ্রী এখান থেকে কেনাকাটার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটায় এখানে ছুটে আসেন সব ধরনের ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এবার ঈদে তরুণীদের আকর্ষণ হচ্ছে ভারতের আলিয়া মার্টের পোশাকের প্রতি। এছাড়াও আফগান, নাইরা, গাউন, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিসসহ নানা ডিজাইনের পোশাক রয়েছে এই মার্কেটে। রোজা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়ও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
দেখা যায়, ঈদ ঘনিয়ে আসায় ক্রেতাদের ভিড়ও দিন দিন বেড়ে চলেছে। জমে উঠেছে ঈদের বাজার। সবকটি দোকানে চলছে ভালো বিকিকিনি। শিশু, তরুণী ও নারীদের পোশাকের দোকানে ভিড় দেখা যায়। বেশি ভিড় দেখা যায়, জুতার দোকানগুলোতে।
পটিয়ার কোলাগাঁও এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন তানিয়া রমজান। তিনি বলেন, প্রতি বছর শপিং কমপ্লেক্সে আসা হয়। বাচ্চাদের নিয়ে এক মার্কেটেই স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করা যায়।
শপিং কমপ্লেক্সের দোকানি কাজল দে জানান, দিনের বেলায় ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকে। ইফতারের পর ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। মধ্যরাত পর্যন্ত বেচাকেনা ভালো হয়।
মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। মার্কেট ছাড়াও শপিং কমপ্লেক্স ঘিরে ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অনেক ভাসমান দোকান। মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাতে বিকিকিনি বেশ জমে উঠেছে।
শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় মেয়েদের অভিজাত পোশাকের দোকান চাঁদোয়া ফেব্রিকসের বিক্রয়কর্মী কাজল সেন বলেন, ‘বেচাকেনা ভালো। শবেবরাতের পর থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ কেনাকাটা শুরু করে। কারণ মেয়েদের পোশাক সেলাই ও টেইলারিংয়ের ব্যস্ততার কারণে আগে-ভাগেই পোশাক কেনে।
আবদুল মান্নান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা যাই হোক না কেন, ঈদ উপলক্ষে মানুষ জামাকাপড় কিনবেই। এবার পোশাকের দাম একটু বেশি। তারপরও পরিবার-পরিজনের জন্য পোশাক-আশাক কেনাকাটা করতেই হবে।
শপিং কমপ্লেক্সের বাইরে রয়েছে জুতার দোকানের বড় দুটি শো-রুম। দুটিতেই কেনাকাটার ব্যস্ততা দেখা যায়। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজনের ভিড় এসব শো-রুমে।
শুধু পোশাক-আশাক নয়, নিচতলায় রয়েছে গৃহসজ্জার বিভিন্ন দোকান। ঈদ উৎসবে নতুন জামা-কাপড়ের সঙ্গে ঘরদোরও সাজসজ্জা করা হয়। গৃহসজ্জার সামগ্রীও ভালো বেচাকেনা হচ্ছে এখানে। এছাড়াও দোতলায় রয়েছে স্বর্ণ ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিশাল সম্ভার। মধ্যবিত্ত ও ধনী শ্রেণির অনেকেই আসছেন স্বর্ণের গহনা এবং টিভি-ফ্রিজসহ ইলেকট্রনিক সামগ্রী ক্রয় করতে। মোদ্দাকথায় বলা চলে, ঈদ উৎসবে নতুন জামা-কাপড়, সাজসজ্জা ও গৃহসজ্জার সব শ্রেণির সব ধরনের পণ্যের জন্য মানুষ ছুটে আসেন চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সে।
পূর্বকোণ/এসএ