চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাথার উপর ছায়াটা নেই

অনলাইন ডেস্ক

৩ এপ্রিল, ২০২৪ | ১:০০ অপরাহ্ণ

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. গাজী সালাহ উদ্দিন। এ শিক্ষাবিদের শূন্যতা অপূরণীয়। রেখে গেছেন এক ছেলে ও এক মেয়েকে। ছেলে সালেহীন তানভীর গাজী বর্তমানে জয়পুরহাট জেলার ডিসি।

বাবার কথা মনে করাতেই একটু নিশ্বাস নিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে মাকে হারিয়েছি। এরপর বাবাই ছিলেন আমাদের ছায়া। কিন্তু করোনাতে বাবাকেও হারাতে হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে হতো মাথার উপর ছায়াটা আছে। কিন্তু এখন এসে সেই শূন্যতা ভীষণ অনুভব করছি। শুধু ছেলে হিসেবে আমি একা এ শূন্যতা অনুভব করছি- তা নয়, বাবার অসংখ্য শিক্ষার্থী আজও তার শূন্যতা অনুভব করছেন। বিশাল এ শূন্যতা পূরণ হবার নয়।

 

ছেলের জন্য আজও কাঁদেন বৃদ্ধ বাবা-মা

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে চিকিৎসকের মৃত্যু হয়, তিনি মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম জাফর হোসাইন রুমি। ২০২০ সালের ২৫ মে মারা যান এ চিকিৎসক। আদরের ছেলেকে হারিয়ে আজও কাঁদেন রুমির বৃদ্ধ বাবা-মা। গতকাল এমন কথা জানান ডা. জাফর হোসাইন রুমির ছোট ভাই জাবের হোসাইন।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল বড় ভাইকে চিকিৎসক বানানোর। সে ইচ্ছে পূরণ হয়েছে, কিন্তু বড় ভাই বেশিদিন মানুষের সেবা করতে পারেননি। সন্তানের মৃত্যু এখনও মানতে পারছেন না বাবা-মা। আজও ভাইয়ের স্মৃতি মনে করে কাঁদেন বাবা-মা। ভাইকে হারিয়ে পুরো পরিবারে শূন্যতা নেমে এসেছে।

 

মানবিক ডাক্তার সামিরুলকে এখনও খুঁজে বেড়ান রোগীরা

করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেসব চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত মুখ ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অর্থোপেডিক্সের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সামিরুল ইসলাম বাবু। যিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন গরিবের বন্ধু হিসেবে। ডা. সামিরুল ইসলামের মৃত্যুতে কেঁদেছিল পুরো চট্টগ্রাম। আজও এসে রোগীরা মানবিক ডাক্তার সামিরুলকে খুঁজে বেড়ান।

ডা. সামিরুল ইসলামের কাছের বন্ধু চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আ ম ম মিন হাজুর রহমান। তিনি বলেন, জীবদ্দশায় তিনি এত মানুষের বিপদে-আপদে এগিয়ে গেতেন, তা অকল্পনীয়। এখনও রোগীরা তাদের মানবিক ডাক্তার সামিরুলকে খুঁজে বেড়ান। অনেক ডাক্তার আসবেন, কিন্তু ডা. সামিরুল আর আসবেন না।
দুই ছেলে এক মেয়ে রেখে গেছেন ডা. সামিরুল ইসলাম। তার সহধর্মিণী চমেকের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুনা ইসলাম। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্তানরা বাবাকে আজও খুঁজে বেড়ায়। মাঝেমাঝে তারা বাবার কথা জিজ্ঞাসাও করে।

 

বাবার শূন্যতা পদে পদে অনুভব করেন ছেলেরা

সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শেখ আবদুল লতিফ। নগরীর হালিশহরের এ বাসিন্দাও মারা গেছেন মহামারী করোনায়। আগ্রাবাদের সোনালী ব্যাংকের এ কর্মকর্তা হালিশহর পিএইচআমিন একাডেমির ১৯৮৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী। স্ত্রী শিরিন আক্তার আমান বাজার কেসি শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষিকা।

স্বামীর কথা প্রসঙ্গে শিরিন আক্তার বলেন, আজও সন্তানরা তাদের বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। কারণ শুধু বাবা হিসেবে তিনি সন্তানদের কাছে ছিলেন না, ছিলেন একজন বন্ধুও। এখনও তারা বাবার জন্য কাঁদে। প্রতিটি মুহূর্তেই তারা বাবার শূন্যতা অনুভব করে। এ শূন্যতা পূরণ হবার নয়।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট