চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

কেনাকাটায় সব শ্রেণি-পেশার ভরসাস্থল রিয়াজউদ্দিন বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ এপ্রিল, ২০২৪ | ১:৩৩ অপরাহ্ণ

ঈদ ঘনিয়ে আসায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রিয়াজউদ্দিন বাজারে চলছে জমজমাট বিকিকিনি। দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। দম ফেলার ফুরসত নেই ব্যবসায়ীদেরও। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পা ফেলার জায়গাও মিলছে না রিয়াজউদ্দিন বাজারের অলি-গলিতে। সবমিলিয়ে এবার রমজানেই রিয়াজুদ্দিন বাজারে কয়েকশ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হতে পারে বলে মনে করছেন এখানকার ব্যবসায়ী নেতারা।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবধরনের পণ্য সুলভমূল্যে পাওয়া যায়। এ বাজারে পুরনো ও জাত ব্যবসায়ীরা থাকায় অন্য মার্কেটের মতো ‘গলাকাটা’ লাভ করেন না। পাইকারি ও খুচরা দরের কাছাকাছি দর রেখে পোশাক বিক্রি করা হয়। চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বলে নগরী ও জেলার যেকোন স্থান থেকে সহজ যোগাযোগ সুবিধা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা এখানে কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। গত শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি রিয়াজউদ্দিন বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানেই রয়েছে বিদেশি পণ্য।

ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দোকানিদের চেষ্টারও কমতি নেই। অবশ্য এখানে আসা ক্রেতারাও কেউ ফিরছেন না খালি হাতে। ১০ রমজানের পর কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠেছে রিয়াজউদ্দিন বাজার। অলি-গলিতে যেন জনস্রোত লেগেছে। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে জমজমাট কেনাকাটা।

 

ঈদের কেনাকাটায় এবার শাড়ি ভালো বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে চাহিদা রয়েছে বেনারসি ও কাতানের। সবকটি দোকান সাজানো হয়েছে অন্য সাজে। শাড়ি ছাড়াও থ্রি-পিস, লুঙ্গি, জুতো, প্যান্ট, জুয়েলারি, প্রসাধনীসহ পাইকারি ও খুচরা পণ্যের বিপুল সম্ভার রয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পছন্দের পোশাক ছাড়াও গৃহসজ্জা, প্লাস্টিকসামগ্রী, চেয়ার-টেবিল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস- সবই মিলে এই রিয়াজউদ্দিন বাজারে।

 

রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. আবু তাহের জানান, ভারতীয় পোশাকের পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী বেনারসি ও কাতানের চাহিদা বেশি। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা শাড়ি, থ্রি-পিসের কদর বেশি রয়েছে। আরেক ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে অত্যাধুনিক অনেক মার্কেট গড়ে উঠলেও সব শ্রেণির মানুষের কাছে ঈদের কেনাকাটায় রিয়াজউদ্দিন বাজারের জুড়ি নেই।

 

জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজার তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক পূর্বকোণকে বলেন, পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য খ্যাতি রয়েছে রিয়াজউদ্দিন বাজারের। পণ্যের গুণগত মান ও আধুনিক কালেকশনের জন্য এটি মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বলে বৃহত্তর বাজারের মধ্যে এ বাজার এখনও অদ্বিতীয়।

 

তিনি বলেন, শুধু চট্টগ্রাম নয়- আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ক্রেতারা রিয়াজউদ্দিন বাজারে কেনাকাটার জন্য আসছেন। শুরুর দিকে পাইকাররা বেশি এলেও এখন খুচরা ক্রেতাদের ভিড় বেশি। সবমিলিয়ে এবার এই বাজারের অধীন ১১০টি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করছেন। আমরা আশা করছি, রমজানেই কয়েকশ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হতে পারে।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, ১২০ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আজও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে রিয়াজউদ্দিন বাজার। ১৯০৭ সালে উকিল রিয়াজউদ্দিন আসাম-বেঙ্গল রেজিস্ট্রি অফিসে বাজারের জায়গা ওয়াকফমূলে দান করে যান। তবে তারও আগে উকিল বাড়ির পাশে পুকুর ধারে ছোট আকারে বাজার বসে আসছিল বলে জনশ্রæতি রয়েছে। সেই থেকে রিয়াজউদ্দিন উকিলের নামে এ বাজারের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে ছোট-বড় বিভিন্ন মার্কেটের সমন্বয়ে প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে এখানে।

 

পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রির জন্য বিখ্যাত এই বাজার। চলাচলের জন্য রয়েছে শতাধিক অলি-গলি ও ৮টি বড় প্রবেশমুখ। এর উত্তরে এনায়েত বাজার, দক্ষিণে স্টেশন রোড, পূর্বে জুবিলি রোড এবং পশ্চিমে বিআরটিসি এলাকা পর্যন্ত রয়েছে বৃহত্তর রিয়াজউদ্দিন বাজারের অবস্থান। পুরনো দোকানগুলোয় এখন এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে অলি-গলির সেই পুরনো চেহারা পাল্টায়নি।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট