চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

বছরাধিক পর মানসিক ভারসাম্যহীন নির্মলের খোঁজ পেল পরিবার

অনলাইন ডেস্ক

২০ মার্চ, ২০২৪ | ১০:০৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর মাদারবাড়ির শুভপুর বাস স্টেশন এলাকায় ডাস্টবিনের পাশ থেকে অজ্ঞাত লোককে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের স্বেচ্ছাসেবকরা।

 

প্রাথমিক অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবকরা লোকটিকে পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করে নিজ হাতে খাইয়ে দেন। অবস্থার অবনতি দেখে স্বেচ্ছাসেবকরা লোকটিকে তৎক্ষণাৎ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ প্রশাসনকে এ বিষয়ে অবগত করে সাথে সাথে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান। দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা রুগ্ন লোকটিকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন লোকটির ছবি ও সন্ধানের বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে প্রচার করা শুরু করে। তারই ফলশ্রুতিতে চমেক হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের রেফারেন্সের মাধ্যমে বরিশালের এক ব্যক্তি আমাদের ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করে লোকটির হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করেন।

 

উল্লেখ্য, লোকটিকে মেডিকেলে ভর্তি করানোর পর থেকে যাবতীয় সকল প্রয়োজনীয়তায় ও লোকটির সেবায় সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়োজিত ছিল। পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টায় লোকটির পাশে ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা মেডিকেলে উপস্থিত ছিলেন।

 

সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের অপু নন্দী বলেন, বরিশাল থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন সঞ্জীব চন্দ্র মুন্সী যিনি সম্পর্কে অজ্ঞাত লোকটির কাকাতো ভাই। সঞ্জীব চন্দ্র মুন্সীর ভাষ্যমতে, উদ্ধার করা লোকটির নাম নির্মল চন্দ্র মুন্সী, পিতা-মৃত পরীক্ষিত মুন্সী, গ্রাম-বাশাইল, ডাকঘর-বাশাইল, থানা-আগৈলঝাড়া, জেলা-বরিশাল, বিভাগ-বরিশাল। নির্মল চন্দ্র মুন্সী একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ২০২২ সালেই হারিয়ে যান এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। উনার পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছেন।

 

গতকাল সকালবেলা নির্মল চন্দ্র মুন্সীর স্ত্রী শ্রীমতি সবিতা তালুকদার ও ছোট ভাই জগদীশ চন্দ্র মুন্সী যথাক্রমে কর্মস্থল কুমিল্লা থেকে ও গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে চমেক কলেজে উপস্থিত হন। স্ত্রী ও স্নেহের ছোট ভাইকে দেখে অসুস্থ নির্মল চন্দ্র মুন্সী আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়েন। নিজের স্বামীকে ফিরে পেয়ে সবিতা তালুকদারও খুবই আনন্দিত হন। পরে উনারা দুইজনেই নিখোঁজ নির্মল চন্দ্র মুন্সীকে শনাক্ত করেন।

 

স্ত্রী সবিতা তালুকদারের জানান, নির্মল চন্দ্র মুন্সী একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় প্রচুর দেনায় পড়ে যান। এমনকি নিজের সম্পদ বিক্রি করেও দেনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। ব্যবসায় ক্ষতির চাপ ও বেকারত্বের চাপ সহ্য করতে না পেরে নির্মল চন্দ্র মুন্সী ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাসা থেকে বের হয়ে যান। অনেক চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

 

প্রাথমিকভাবে তদন্ত সহায়ক হিসেবে জিডি কপি ও নিখোঁজের বিজ্ঞাপনপত্রের কপি আমাদেরকে প্রদর্শন করেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক যেসকল শারীরিক পরীক্ষা করাতে বলেন, সবগুলো পরীক্ষা করাতে সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের স্বেচ্ছাসেবকরা উনাদের সহায়তা করেন। সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের সাথে নির্মল চন্দ্র মুন্সীর ছেলে নয়ন চন্দ্র মুন্সী মোবাইলে যোগাযোগ করেন।

 

আজ বুধবার (২০ মার্চ) সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিম নির্মল চন্দ্র মুন্সীকে উনার স্ত্রী সবিতা তালুকদারকে ও ছোটভাই জগদীশ চন্দ্র মুন্সীকে বুঝিয়ে দেন। এবং উনার সুস্থতায় সর্বদা পাশে থাকার আশ্বাস দেন। উনার সুচিকিৎসা নিশ্চিত সাপেক্ষে উনাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টার করার জন্য উনার পরিবারের কাছে বিনীত অনুরোধ করা হয়।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট