চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

সবকিছু করা সম্ভব, দরকার সুদৃষ্টি 

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের অনেককিছু খুব গভীর থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কোন বিষয়ে খুব বেশি সমস্যার সৃষ্টি হলেই তবে আমরা প্রতিবাদ করে থাকি। যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। 

একসময় চট্টগ্রামকে প্রাচ্যের সৌন্দর্যের রাণী বলা হত। বর্তমানে সেটা বলার সুযোগ নেই। সবকিছু করা সম্ভব কিন্তু সরকারের সুদৃষ্টি দরকার। চট্টগ্রামে ঝিরি ঝর্ণার বহর ছিল যেটা অনেকে জানে না। নদী নালা যা কিছু আছে সবগুলোর উৎস ছিল এই ঝিরি ঝর্ণা। মাছুয়াঝর্ণা নামে একটা এলাকা আছে কিন্তু ঝর্ণাটা নেই। ৫-১০ বছর আগে চলে গেছে। তারপর আছে হাকিমের লেন। সেখানে ঝর্ণা ছিল একসময় এখন সেটাও নেই। প্রেসক্লাবের সামনে লিচুতলা এলাকায় একটা ঝর্ণা ছিল সেটাকে এখন ময়লার ভাগাড় বানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কলেজের পাশেও ঝর্ণা ছিল। আরও প্রায় আটটি জায়গায় ঝর্ণা ছিল। যেগুলো হারিয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে কেউ কখনো প্রতিবাদও করেনি। বর্তমানে যে জায়গায় শহীদ মিনার করা হয়েছে সেখানে ছিল জিন্নাহ পার্ক। যেটি সারা বাংলাদেশের মধ্যে সেরা সুন্দর পার্ক ছিল। হিলের পাদদেশে পার্ক। ওখানে একটা সুন্দর পুকুর ছিল। যেখানে সাকি নামে একটা ফিল্মের শুটিং হয়েছিল। সেখানে পাশে একটা কোহিনূর স্টুডিও ছিল। এই পার্ক ধ্বংস হওয়া নিয়ে কেউ লেখালেখি করে না। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হয়েছে আজকে একশ’ বছর। এটা হয়ে  তো তেমন লাভ হয়নি। পজিটিভ কিছু করতে হবে যেটা দৃশ্যমান হবে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে এমন কিছু ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে যেগুলো দেখলে খুব খারাপ লাগে। এগুলোতে কোন মানই নেই। সত্যজিৎ আর বিশ্বজিৎ কখনো এক হয় না। মালাক্কার চেয়ে কুয়ালালামপুরে টুইন টাওয়ার বেশি । বর্তমানে টুইন টাওয়ারের মত অনেক টাওয়ার নির্মিত হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় মালাক্কা তৈরি হয়নি। ছোট্ট একটা শহরে ১৫টি জাদুঘর রয়েছে। চট্টগ্রামে কয়টা জাদুঘর রয়েছে? চট্টগ্রামে এমন অনেক জাদুঘর রয়েছে যেগুলো শহরের অনেকে চিনেই না। উপজাতীয় যে জাদুঘর চট্টগ্রামে আছে সেটির কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। যেটি বাংলাদেশের কোথাও নেই। একটা নগরের মান উন্নয়নে জাদুঘরের ভূমিকা অপরিসীম। গত ৫০-৬০ বছরে চট্টগ্রামে দৃশ্যমান কোন উন্নয়নই হয়নি। সিআরবিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট না করে আশির দশকের রাস্তাটি সিঙ্গেল থেকে ডাবল লাইনে পরিণত করা হয়েছে। চট্টগ্রামে এটাই একমাত্র সুন্দর কাজ বলে আমার মনে হয়। শুধুমাত্র মেধার বিকাশ ঘটালেই অনেক কিছু করা সম্ভব। সিআরবিতে এখন মেলা, খেলা, বলি এবং হলি করছি। এ জায়গাটা কী এটার জন্য তৈরি হয়েছে? বিশ্ব ক্রিকেট জয় করে চট্টগ্রামে একবার ইমরান খান এসেছিলেন। তাকে সিভিক রিসিপশন দেয়া হয়েছিল সিআরবির সামনের মাঠে। খুব সুন্দর একটা আয়োজন হয়েছিল। ইরানের ইস্পাহানে বিরাট একটা রাজপ্রাসাদ ছিল। তারা সেটাকে সংস্কার করে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ করেছে। এখানে ভিজিটররা ভ্রমণ করে চলে যায়। যেখান থেকে আয়ও হল, দেখাও হল, ভালো ব্যবহারও হয়েছে। আমি সিআরবিকে ফাইভ স্টার হোটেল করার জন্য বলেছিলাম। চট্টগ্রামে যতোগুলো হিলটপ আছে সবগুলো ব্রিটিশ আমলের। মহসিন কলেজের ভবনগুলো পর্তুগিজদের করা। চকবাজারের চন্দনপুরা মসজিদটি জাপানের একটা ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যা আজ থেকে ১৫ বছর আগে 

দেখেছি। সৌন্দর্যবর্ধন মানে অপরিকল্পিত ম্যুরাল নয়। সৌন্দর্যবর্ধনে চট্টগ্রামে যত সুযোগ আছে ঢাকায় তার অর্ধেকও নেই। রিয়াজুদ্দিন বাজারটা প্রায় পাঁচ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এখানে শুধু দখল চলছে। এটাকে সিঙ্গাপুরের আদলে তৈরি করা যেতো। এগুলো নিয়ে কারো কোনো পরিকল্পনা নাই। আমাদের একটাই কথা আমরা একটা সুন্দর গোছালো পরিকল্পিত নগরী প্রত্যাশা করি। আমরা লজিক্যাল একটা সাসটেইনেবল কিছু করিনি এই শহরের জন্য এবং এখানো আমরা কিছু করছি না। ভালো কাজের যেমন সুনাম করতে হবে খারাপ কাজের জন্যও সমালোচনা করতে হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট করে চট্টগ্রামে অনেক নতুন নতুন কিছু নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা একটা অদ্ভুত শহরে বসবাস করি বলে অদ্ভুত সব মানুষের উপর দায়িত্ব দিয়ে শহর চালাচ্ছি। সৌন্দর্যবর্ধনে পাঁচ বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়। প্রথমত, চট্টগ্রাম শহরে পর্যাপ্ত কবরস্থান দরকার। ঢাকায় একটা কবরের দাম ৫০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামে কবরস্থানের প্রচ- সংকট রয়েছে। দ্বিতীয়ত, পার্ক। পার্কের বিষয়ে আমাদের ভালো করে চিন্তা করতে হবে। তৃতীয়ত পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। খেলাধুলার মাঠগুলোতে মেলা, শিশু পার্ক বসছে। যেকোনো মূল্যে খেলার মাঠ বাড়াতে হবে। চতুর্থত পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা জরুরি। পঞ্চমত পরিবেশের ইস্যুগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট