চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্বে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে হলে শিল্পচর্চা বাড়াতে হবে

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

বাংলা সংস্কৃতি কিন্তু ইসলামি সংস্কৃতি থেকে অনেকটা আলাদা। আবার এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথেও যায় না। যদি বাঙালি মুসলিম ও বাঙালি হিন্দুরা একসাথে ভাবতে পারতো যে এটি আমাদের সংস্কৃতি, তাহলে জটিলতা অনেকটা সহজ হত। যার প্রভাব সারাবাংলা তথা চট্টগ্রামেও পড়েছে।

 

আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ চট্টগ্রামের যে সাহিত্য খুঁজে বেড়িয়েছেন তার ধারাবাহিকতা এখন আর নেই বললে চলে। আনুমানিক ১৮ শতকের শেষ দিকে শিকল নন্দী নামের এক লেখক চট্টগ্রামের ভাষায় একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। উপন্যাসটির ধারাবাহিকতা রক্ষা না করায় পরবর্তীতে বইটি হারিয়ে গেছে। এভাবেই চট্টগ্রামে সাহিত্যের বিকাশ তার স্বতন্ত্রতা হারিয়ে হাজার বছরের চর্যাপদ থেকে যে বাংলা ভাষার শুরু হয়েছে তার মধ্যে মিশে গেছে।

 

একজন হরিশংকর জলদাস, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, শিশির দত্ত, কিংবা আবুল মোমেন যাই বলি না কেন তারা বাংলা সাহিত্যের মানুষ। তাদের লেখনীতে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের সাহিত্য ফুটে উঠেনি। এদের লেখনীগুলো যদি আমরা বিশ্বের বাঙালি পাঠকের কাছে তুলে ধরি তারা বলবে এটা বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন। চট্টগ্রামের সাহিত্য নয়। তবে লেখনীর মাধ্যমে কিছুটা চট্টগ্রামের স্বতন্ত্রতা তুলে ধরেছেন হরিশংকর জলদাস। তিনি চট্টগ্রামের জেলেজীবন নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন, উপন্যাস লিখেছেন। তার এ লেখনীর মাধ্যমে চট্টগ্রামকে খুঁজে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের সাহিত্য সাধনায় যারা আছেন তারা আসলে বাংলা ভাষারই সাহিত্যসাধক। এখানে আলাদা কোনো চট্টগ্রামের সাহিত্য নেই বলেই আমি মনে করি। চট্টগ্রামের সাহিত্য হচ্ছে আগের সেই লোকছড়া, লোকগান, যার মধ্যে এখনও সীমাবদ্ধ। এরমধ্যে চট্টগ্রামের আলাদা কোনো সংস্কৃতি দাঁড়ায়নি। অথচ চট্টগ্রামের সংস্কৃতিতে সাহিত্যের যে অংশটি আছে সেখানে হলাগান, যাত্রাপালাসহ নানা রকমের এক বিচিত্র রং ছড়িয়ে ছিল। এসব রং আমাদের সমাজ উন্নয়নের হাতিয়ার মনে করি। তবে সেই হাতিয়ারে এখন জং ধরেছে। এর একটি বড় কারণ আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে গিয়েছি। যদিও সংস্কৃতি প্রতি মুহূর্তেই বিবর্তিত হয় । কিন্তু বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন যে বিবর্তনের ধারায় নতুনত্ব আসছে এটি খুব একটা ভালো দিক নয়। সারা বিশ্বেই সংস্কৃতির মধ্য বিবর্তন আসছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় প্রত্যেকে তাদের সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রাধান্য বেশি দিচ্ছে। যে কারণে নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে নীরবেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জাতি। এক কথায় বললে সাহিত্যের মধ্যে চট্টগ্রামের উজ্জ্বল নক্ষত্র যারা তারা চট্টগ্রামের সাহিত্য নিয়ে আন্দোলন করলেও তাদেরই লেখনীতে চট্টগ্রামের সাহিত্য নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য আমিও সেই লেখকদের মধ্যে আছি। আমার লেখনীতেও আলাদা করে চট্টগ্রামের সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারিনি। চট্টগ্রামে উদীয়মান অনেক লেখক আছেন। তারা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে কিন্তু চট্টগ্রামের সাহিত্যকে নয়।

 

এখন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে আর হারমোনিয়াম দেখা যায় না। তারা ভাবে গান, নাচ শিখানো ঠিক না, নাটক কেন করবে। এসব ধর্মীয় দিক থেকে ঠিক না। এখন পরিবারগুলোর মধ্যে সংস্কৃতিচর্চা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা চলে এসেছে। এভাবে মূল জায়গায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যদি সংস্কৃতির চর্চাই না হয় তাহলে সংস্কৃতির প্রচার কীভাবে হবে। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি আলাদা কিছু নয়। এটি বাংলাদেরই সংস্কৃতি। আগে শিল্পচর্চায় আসতে হবে। তাহলেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা যাবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট