চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

একটা শহর কতটা সভ্য সেটা গণপরিবহনেই বোঝা যায়

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ২:৩৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম গণপরিবহনবান্ধব নগরী কিনা, এ ধরনের একটা প্রশ্ন আমাদের মাঝে আছে। শহরের পরিবহন ব্যবস্থাকে আমরা কীভাবে দেখতে চাই এবং যেভাবে দেখতে চাই তার সাথে বাস্তবতার মিল আছে কিনা, এসব নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা আছে।

 

আমরা দেখি নগরীর প্রতিটা মোড়ে সাইনবোর্ড দেওয়া আছে যে ২০০ গজ দূরে বাস থামবে। কিন্তু ওখানে বাস থামে না। বাস থামে অন্য জায়গায়। দেখা যায় কোন মোড়ে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গিয়ে বাস থামে। এতে করে সড়কে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। অযথা যানজটের সৃষ্টি হয়।

 

একটা শহর কতটা সভ্য, সেটা সেখানকার গণপরিবহন দেখলে বোঝা যায়। কিন্তু আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থা মোটেও সন্তোষজনক নয়। অনেক কথাবার্তা হয় গণপরিবহন নিয়ে। ড্রাইভারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও কথা হয়। আবার অভিযোগ আছে যাত্রীদের সাথে কন্ডাক্টর, হেলপারদের আচার ব্যবহার ভালো না। এটা তো কোনভাবেই কাম্য না। মহিলাদেরকে বাসে উঠানোর সময় হয়রানি নতুন কথা নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ওঠার সময় বা নামার সময় যাত্রীদের মানিব্যাগ হারিয়ে যায়।

 

আরেকটা বিষয় হলো গাড়িগুলোকে কেন মোড়ে দাঁড়াতে হবে? এটার অনেক যুক্তি আছে। যুক্তি না বলে এগুলোকে কুযুক্তি বলাই ভালো। নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ালে কী সমস্যা? নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়ালে তো শৃঙ্খলা থাকে। আবার দেখা যায় যেখানে সেখানে পার্কিং এবং রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। এছাড়া গাড়িতে ভাড়ার তালিকা খুঁজে পাওয়া যায় না। এর ফলে যাত্রীদের সাথে চালক হেলপারের তর্কাতর্কি হয়।

 

প্রত্যেকটা শহরেরই কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বা থাকে। শুধুমাত্র গণপরিবহন দিয়েই তো একটা শহর চলতে পারে। কিন্তু এত গণপরিবহণের ব্যবস্থা আমাদের দেশে এখনও করা হয়নি। এটা আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা। যদি কখনও হয় সেটা তখন দেখা যাবে। আমরা যেমন আমেরিকার গল্প শুনি, ওখানে আমাদের দেশের মতো সিএনজি ট্যাক্সি নেই। কিন্তু এর বিকল্প ব্যবস্থা আছে। তাদের প্রাইভেটকার আছে। সেদিক থেকে গত ৪-৫ দশক ধরে আমাদের সামর্থ্যরে মধ্যে বৈধ বাহন হচ্ছে বেবি ট্যাক্সি।

 

এখন যেটাকে সিএনজি ট্যাক্সি বলি। নগরীতে সিএনজি ট্যাক্সির অনুমতি আছে ১৩ হাজার। কিন্তু আমার মনে হয় চট্টগ্রাম শহরে চলে এর তিন গুণ, অর্থাৎ প্রায় ৩৯ হাজার।

 

বাসগুলো একসময় টাইমিং শিট মেনটেইন করতো। এগুলো এখন দেখা যায় না। গাড়ি কখন ছাড়ে আর কখন পৌঁছে কোন ঠিক নেই। হয়তো ড্রাইভার কন্ডাক্টররাও চাপে থাকে, গাড়ির মাালিককে দৈনিক দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা দিতে হয় তাদের। তাই আল্টিমেটলি সে চিন্তা করে যেভাবেই হোক তার ইনকাম দরকার, সময় মেনটেইনের দরকার নেই। এজন্য অনেকদিন থেকেই বলা হচ্ছে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও গাড়িগুলো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসতে। তাহলে হয়তো কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরতে পারে।

 

তবে যে যাই বলুক, স্বল্প খরছে আরামদায়ক আর নিরাপদ সুবিধা দিতে পারে একমাত্র বাস। তাই বাসগুলোকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা উচিত। আর কিছু না হলেও অন্তত ওয়ান ইলেভেনের মতো ফরম্যাটে এনে কাউন্টার বেইজড করা দরকার। তাহলে আর যত্রতত্র গাড়ি থামার সুযোগ থাকবে না। অবশ্যই কাউন্টারের সামনে দাঁড়াতে হবে।

 

ওয়ান ইলেভেনের সময় চট্টগ্রাম শহরের গাড়িগুলোকে বাধ্য করা হয়েছিল পুরোপুরি কাউন্টার সিস্টেম করার। ওয়ান ইলেভেনে শৃঙ্খলা ফেরানো গেলে এখন কেন পারা যাবে না? তার মানে সিস্টেমটা ডেভেলপ করে আপনি যদি তা যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে। আমরা আমাদের আচরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য হবো।

 

অনেকের মতে প্রশাসন ঠিক হয়ে গেলে পরিবহন অটোমেটিক ঠিক হয়ে যাবে। তার মানে ওই জায়গাটায় আমাদেরকে একটু কাজ করতে হবে। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। সবারই দায়িত্ব আছে। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সেই দায়িত্ব পালন করে গেলে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট