চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৈরাজ্য বন্ধ না হলে সহসাই নগরীতে বাস বলতে আর কিছু  থাকবে না

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১২:৩৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০০ সালের আগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণপরিবহনগুলো চলাচল করতো। তখন গাড়িগুলো দুই শিফটে চালানো হতো। সকাল ৬টা থেকে একটা গাড়ি দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে আরেকটা গাড়ি বের হতো রাত ১০টা পর্যন্ত। এসব গাড়িকে তখন মালিক সমিতি থেকে একটা সিরিয়াল নম্বর দেয়া হতো। মালিক সমিতি থেকে দেয়া রোটেশন ভিত্তিক এই শিডিউলে একটা গাড়ি চলতো দুইদিন ১ নম্বর রুটে এবং পরের দুই দিন ২ নম্বর রুটে। এভাবেই গাড়িগুলো চলাচল করতো। যখন যার রুট যেখানে, তখন সেই রুটে চলতো।

তখন ওই নম্বর নিয়ে ওয়ার্কশিটের মাধ্যমে লেখা থাকতো কে কোন রুটে গাড়ি চালাতে পারবে। বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ যেতে কতক্ষণ লাগবে সেটাও লেখা থাকতো। এর থেকে দেরি হলে একটা জরিমানা করা হতো। জরিমানাটা মালিক সমিতিতে জমা হতো। মালিক সমিতি তার পেছনের গাড়িকে ওই টাকাটা দিয়ে দিতো। কিন্তু এর পরে দেখা গেলো, ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্নভাবে গাড়ি রাস্তায় চলে আসলো। তখন আমাদের মালিক সমিতি ছিল একটাই। ১/১১ এর পরে মালিক সমিতি ভাগ হয়ে গেলো। যেহেতু এইসব লোনের গাড়ি। তাই লোনের কিস্তি পরিশোধের জন্য সারাদিন চালাতে হতো। পাশাপাশি রাইডারসহ বিভিন্ন গাড়িও চলতে শুরু করলো। তখনও মালিকেরা ব্যবসা করেছেন। একটা গাড়ির আয় দিয়ে একটা সংসার চলতো। বর্তমানে পাঁচটা গাড়ি দিয়েও একটা সংসার চলে না।

আমার মনে হয় করোনার পর থেকে গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠার জায়গা খুব একটা নেই। চট্টগ্রামে টেম্পো, ম্যাক্সিমা এবং টুকটুকি গাড়ি খুব বেশি বেড়ে গেছে। ম্যাক্সিমা গাড়িগুলোর যদি পারমিট থাকে ১০০টা, সেখানে চলছে ৫০০টা। এটা কীভাবে চলছে নিশ্চয়ই প্রশাসন জানে। তা না হলে এসব গাড়ি রাস্তায় চলতে পারতো না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বৈধ গাড়ি যেগুলোর পারমিট থেকে শুরু করে সবগুলো ডকুমেন্টস ঠিক আছে, ওগুলো পুলিশ আটকে দেয়। কিন্তু যেগুলোর কোন কিছু ঠিক নেই, সেগুলো পুলিশ আটকাবে না। আমরা যারা বৈধ উপায়ে গাড়ি চালাচ্ছি, তারা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।

আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য আগের মতো সিস্টেমে আসতে হবে। ২০০৪-০৫ সালের দিকে আমরা কাউন্টার সিস্টেম করেছিলাম। কিন্তু টিকে থাকতে পারিনি। যেটার পেছনে স্টাফরাও দায়ী। তাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ানোর। কিন্তু দেখা গেলো সে কাউন্টারে দাঁড়ানোর আগেই যাত্রী নিয়ে ফেলছে। তখন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

টেম্পো-ম্যাক্সিমা বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে বাসে যাত্রী কম পাচ্ছে। যাত্রীরা তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য ছোট গাড়িতে ঝুঁকছে বেশি। ছোট গাড়ি ১০ জন হলেই চলে যাচ্ছে। কিন্তু বাস সেটা কভার করতে পারছে না। আরেকটা বিষয় আছে যেটা স্বীকার করতে হবে- কিছু কিছু বাস মালিক আছে যারা কন্ট্রাক্ট সিস্টেমে গাড়ি ড্রাইভারকে দিয়ে দেয়। অনেকে কন্ট্রাক্ট ছাড়া। আমি নিজের গাড়িগুলো কিন্তু কন্ট্রাক্টে দেই না। 

ড্রাইভাররা এই গাড়ি নিতে চায় না। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা এ গাড়িগুলো চালায় না। বাসগুলো চলছে কোনরকমে। এর মধ্যে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হচ্ছে বাসের পার্টসের দাম বেশি বেড়ে গেছে। টায়ার-টিউব, যন্ত্রাংশ যত আছে, সবকিছুর দাম অনেকগুণ বাড়তি। এখন কিছু ডুপ্লিকেট যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। সেটা কিনেও ঠকতে হচ্ছে। কারণ দাম নেওয়া হচ্ছে একই। ফলে মালিকেরা কোনরকম পোষাতে পারছে না।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসন যদি ঠিক থাকে তাহলে চট্টগ্রাম নগরী স্বর্ণ নগরীতে পরিণত হবে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায় তাহলে কোন কাজ করা সম্ভব হবে না। এভাবে চললে আগামী দিনে চট্টগ্রাম শহরে বাস থাকবে না। বাস কেউ কিনবে না। কেউ বিনিয়োগ করবে না এবং যে বিনিয়োগ করবে, সেটা কোনদিন ফেরত আসবে না। যার কারণে বাস বেচাকেনাও বন্ধ হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগে এডিশনাল কমিশনার মোস্তাক চট্টগ্রামের গাড়িগুলোতে এক প্রকার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তখন মালিক শ্রমিক সবাই টাকা পেয়েছে। রোডে যানজটও ছিল না।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো রুটে গাড়ি চলতে হবে। মধ্যখানে গাড়ি ঘুরাতে পারবে না। তাহলে যানজটের সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে। চকবাজারের অলি খাঁ থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত রুটে একটা বাসও নেই। রুট পারমিটে কিন্তু লেখা আছে বাস চলাচল করছে। ১০ রুটের সব গাড়ির অতিরিক্ত যাত্রী থাকে। অন্য রুটে নেই। এভাবে চলা যায় না। যদি সিস্টেমের মধ্যে চলে তাহলে বাসও সুন্দরভাবে চালাতে পারবো। যাত্রীও পাবে। বাসের সার্ভিসও আমরা আরও ভালোভাবে দিতে পারব।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট