চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ৩০ জলদস্যু গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ৫:৪৯ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটে দুর্ধর্ষ ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৩০ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭। এসময় তাদের কাছ থেকে ৮টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৫টি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার ও ২টি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে।

 

গ্রেপ্তার জলদস্যুরা হলো- করিম (৩৩), মো. রুবেল (৩৩), মো. জফুর (৩৫), শফি আলম (৪০), আব্দুর রহিম (২৫), মো. শামীম (২১), মো. ইউসুফ (২৯), শাজাহান বেগম (৩৭), মো. সাহাব উদ্দিন (৩৫), মো. শওকত (৩৭), মো. ইসমাইল (২৬), দেলোয়ার ইসলাম (৪২), নুর মোহাম্মদ (১৭), আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), মো. মফিজুর রহমান (৩০), ফজল হক (৪০), মো. গিয়াস উদ্দিন (২৬), মো. কাছেদ (১৯), মো. আকিদ খান (৩৭), মো. দিদারুল ইসলাম (৩৩), মো. নাইম (১৯), মো. হারুন (৪৪), মো. ইয়াছিন (২৯), মো. খলিলুর রহমান (২৫), মো. ইকবাল হোসেন (২৪), মো. শাহেদ (২২), ২৭। মো. হোসেন (২৭), মো. আলী হোসেন (২৪), আব্দুল মান্নান (৪০) ও মো. সোলায়মান (৩৮)।

 

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) নগরীর পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ফিশারি ঘাট এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মাহবুব আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

তিনি জানান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা ও বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যু বাহিনী কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর সম্প্রতি তারা আবারও সাগরে জেলেদের উপর অত্যাচার, জুলুম, চাঁদাবাজি এবং অপহরণ শুরু করেছে। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর গতকাল রবিবার থেকে আজ সোমবার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থল ও সাগর পথে ৪৮ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে ৩০ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৮টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৫টি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার ও ২টি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জলদস্যুরা জানায়, তারা পুরো এক-দুই সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করে দাপিয়ে বেড়ায়। গডফাদারদের কাজ হলো অস্ত্র, গুলি এবং ট্রলারের যোগান দেয়া। বিভিন্ন নৌ, লঞ্চ, স্টিমার ঘাটে সোর্সের মাধ্যমে সাগরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে যাচ্ছে কিনা তা তদারকি করে জলদস্যুরা। উপকূলে আসার সময় এসব তথ্য অবগত করাসহ বোট মালিক এবং মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে ডাকাতির মাছ ও মালামাল বিক্রি করে তারা। এছাড়াও জলদস্যুরা সাগরে গিয়ে ডাকাতি করে মাছ এবং মালামাল বিক্রির টাকার ৪০ শতাংশ কথিত গডফাদারের, ২০ শতাংশ তেল খরচ এবং বাকি ৪০ শতাংশ ডাকাতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সদস্যদের মাঝে বণ্টন করতো।

 

আরও জানা যায়, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের তিনটি সশস্ত্র ডাকাত চক্র (ভোলা, বরিশাল, কুতুবদিয়া এবং আনোয়ারা এলাকায়) একত্রিত হয়ে সাগরে বড় পরিসরে দস্যুতার পরিকল্পনা করছে। চক্রটির আগামী দশ বার দিনের মধ্যে প্রায় ১৫-২০ টি ট্রলারে ডাকাতি করার পরিকল্পনা ছিল। ডাকাতি শেষে লুটপাট করা মাছ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে নিয়ে বিক্রি করতো। পরবর্তীতে লাভের টাকায় আনোয়ারা-কুতুবদিয়া এলাকার জলদস্যুদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হতো।

 

বিশেষ সূত্রের বরাতে তিনি আরও জানান, এই ডাকাত দল মূলত তিনটি পর্বে বিভক্ত হয়ে তাদের দস্যূতার কার্যক্রম পরিচালনা করতো। আসামি শাহেদ মাঝি ছিল প্রথম গ্রুপের দলনেতা। সে মূলত কুতুবদিয়া এলাকার অধিবাসী। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা। শাহেদ মাঝির দলে ৯ জন ডাকাত সদস্য ছিল।

 

আসামি ইউসুফ মাঝি ছিল দ্বিতীয় গ্রুপের ডাকাত নেতা এবং ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী। সে প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিবার্চন করতো। বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করে ডাকাতির জন্য প্রস্তুত করে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় একত্রিত করতো। এরপর ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে নিজে সশরীরে হাজির থেকে ডাকাতির কার্যক্রম সম্পন্ন করতো। ইউসুফ মাঝির দলে ১১ জন ডাকাত সদস্য ছিল।

 

আসামি করিম মাঝি ছিল তৃতীয় গ্রুপের ডাকাত নেতা। তার কাজ ছিল ডাকাতির পরে লুণ্ঠিত বোট, মাছ, জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সুবিধামত বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে ওই টাকা গ্রুপের সকল সদস্যকে সমানভাবে বণ্টন করা। করিম মাঝীর দলে ১০ জন ডাকাত সদস্য ছিল।

উল্লেখ্য, ইউসুফ মাঝি এবং করিম মাঝির নিজস্ব বোট ও কোম্পানি রয়েছে, যা দিয়ে তারা মাঝির ছদ্মবেশে সমুদ্রে দস্যূতার কার্যক্রম পরিচালনা করতো।

 

তারা আরও জানায়, কয়েকটি সংঘবদ্ধ চিহ্নিত শীর্ষ জলদস্যু ও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য এবং বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকার সংঘবদ্ধ জলদস্যু ঘটনায় সম্পৃক্ত সক্রিয় সদস্য তারা। এছাড়াও এই দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী থানা এলাকাসহ সাগর পথে বিভিন্ন চ্যানেলে ডাকাতি করে আসছে।

পূর্বকোণ/পিআর/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট