চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুখস্থ বাদ দিয়ে হাতেকলমে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী করবে

অধ্যাপক জাহেদুল হক

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন শিক্ষাবোর্ডে কলেজের সংখ্যা ছিল ১শ’রও নিচে। এখন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের আওতায় কলেজের সংখ্যা প্রায় ২৮৫। আর স্কুলের সংখ্যা পূর্বে ছিল ৮শ’র কাছাকাছি। এখন স্কুল সংখ্যা প্রায় ১৪০০। প্রতি বছর যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করছে, তাদের ভর্তির জন্য আসনের কোন অভাব নেই। আমাদের প্রায় এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি আসন আছে। এ বছর ভর্তি হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী। কিন্তু সবাই চায় ভালো কলেজে ভর্তি হতে। শহরে আমাদের আটটা সরকারি কলেজ আছে। এসব কলেজে ভর্তি হতে হলে জিপিএ-৫ পেতে হবে। বিজ্ঞানে এগুলোতে আমাদের আসন সংখ্যা প্রায় ৩২০০টি। কিন্তু গতবার এসএসসিতে আমাদের জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ হাজার।

শিক্ষার্থীদেরকে তাদের চয়েস ও মেরিটের ভিত্তিতে এসব কলেজে ভর্তির জন্য সিলেক্ট করা হয়। সে তার মেরিটের ভিত্তিতে কমপিট করে যেখানে টিকবে সেখানে তাকে সিলেকশন দেয়া হবে। এখন আমাদের একটা মনোভাব হলো জিপিএ-৫ পেলেই চট্টগ্রাম কলেজে পড়তে হবে কিংবা মহসিন কলেজ বা অন্যান্য সরকারি কলেজে পড়তে হবে। আমাদেরকে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ আছে যারা অনেক মানসম্পন্ন। সেখানে পড়ালেখা করে স্টুডেন্টরা ভালো রেজাল্ট করছে।

 

শুধু শহরেই না, আমি কিছুদিন আগে একটা কলেজ ইন্সপেকশনে গিয়েছিলাম, কলেজটি হলো নৌবাহিনী পরিচালিত কাপ্তাই বিএন কলেজ। পাঠদানের অনুমতি দেয়ার সময় যখন আমরা সেখানে গিয়েছিলাম, তখন তাদের ডাটায় আমরা দেখেছি জেএসসি ও এসএসসিতে হান্ড্রেড পার্সেন্ট পাস। আমি একটু অবাক হলাম যে কাপ্তাইয়ের মতো জায়গায়, যেখানে প্রায় ফিফটি পার্সেন্ট স্টুডেন্ট উপজাতি অথবা ওখানকার নেটিভ। আর কিছু স্টুডেন্ট অফিসারদের বা ভালো অভিভাবকদের সন্তান। সেখানে হান্ড্রেড পার্সেন্ট পাস আমাদেরকে খুবই অভিভূত করলো এবং আমরা তাদেরকে বিনাদ্বিধায় কলেজ হিসেবে পাঠদানের অনুমতি দিলাম। এরপর তিন বছর তারা রেজাল্ট করলো, তিন বছরেই তাদের পাসের হার ১০০ পার্সেন্ট। এছাড়া গতবার তাদের ১৪৪ জন স্টুডেন্টের মধ্যে ৯৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ জায়গায় একটা প্রতিষ্ঠান কীভাবে এত ভালো রেজাল্ট করলো, এটি আমাকে একটু অবাক করলো। আমি দেখলাম তাদের টিচারদের অসম্ভব ডেডিকেশন এবং প্রত্যেক স্টুডেন্টের ব্যাপারে টিচাররা খুবই যতœবান। আমাদের চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আছে, এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম শহর এবং কক্সবাজারে পাসের হার ভালো থাকে। কিন্তু হিলি এরিয়ায় যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, এগুলোতে স্টুডেন্টরা রেগুলার যেতে পারে না। এজন্য হিলি এরিয়াতে আমরা পাসের হারে পিছিয়ে আছি। এছাড়া আমাদের অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোতে শিক্ষক সংকট আছে, মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব আছে। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানসম্পন্ন ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের স্বল্পতা। এটা যদি আমরা ওভারকাম করতে পারি, তাহলে আমাদের এখানকার শিক্ষার মান অনেক বৃদ্ধি পাবে।

 

আসন সংকট নিয়ে বলতে গেলে আমাদের আসলে আসনের অভাব নেই। আমাদের অনেক কলেজের সায়েন্সে শতশত আসন খালি আছে। এমনও দেখা যায়, সায়েন্সে একটা কলেজে আমরা ১৫০টি আসন দিয়েছি। কিন্তু সেখানে মাত্র ৩০ জন ভর্তি হয়েছে। অথচ শহরে স্টুডেন্টদের বিশাল চাপ রয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে আভিজাত্যের বিষয়টি সামনে আসে। এজন্য দুটি বিষয় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং অভিভাবকদের মেন্টালিটি।

 

তবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, সে হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিন্তু বাড়ছে না। আমাদের কাছে যে ডাটা আছে, এসব ডাটা এনালাইজ করলে দেখা যায়, আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। অনেকগুলো নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি ও সরকারিকরণ করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট আছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে।

 

আমাদের নতুন কারিকুলাম নিয়ে কথা হচ্ছে সম্প্রতি। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা তৈরি হয়, সেজন্যই এই নতুন কারিকুলাম। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস টু থেকে মেট্রিক্স পদ্ধতি পড়ে, ১০ মিলিমিটারে এক সেন্টিমিটার। কিন্তু এক সেন্টিমিটারের পরিমাণ কতটুকু জানতে চাইলে তারা রেসপন্স করতে পারে না। অথচ নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তবে শেখানো হচ্ছে ইঞ্চি, সেন্টিমিটার, মিটার। কাজেই মুখস্থবিদ্যা বাদ দিয়ে নতুন কারিকুলাম আমাদেরকে যুগোপযোগী করবে। আমাদের নতুন কারিকুলামে ভাষা ও যোগাযোগ আছে। ফলে ক্লাস সিক্সের একটা স্টুডেন্টও ইন্টারভিউ নিতে পারছে। আগে আমরা মুখস্থ গণিত করতাম। কিন্তু এখন গণিতের সাথে যুক্তি জুড়ে দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, শিল্প ও সাহিত্যের মতো বিষয় রয়েছে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষকরা ট্রেনিং নেয়ার পরে নিজেরাও কিন্তু পড়ালেখা করতে হবে। আমাদের শিক্ষকদেরকে একটা টিচার গাইড দেয়া হয়। উনি সাতদিনের ট্রেনিং নেওয়ার পরে ওই টিচার গাইড অনুযায়ী নিজেদেরকে তৈরি করবেন। তবে সীমাবদ্ধতা থাকবেই। নতুন কিছু ইন্ট্রোডিউস করলে সমালোচনা হবেই। যদি সমালোচনা যথার্থ হয়, তাহলে সেটা এনসিটিবি সমন্বয় করে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তাই আমাদের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই কারিকুলামকে এগিয়ে নিতে সবাই সহযোগিতা করবো।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট