চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভাড়ায় বৈষম্য, চড়া টিকিটের মূল্য

ইমাম হোসাইন রাজু

২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ | ২:৫০ অপরাহ্ণ

একমাসের ব্যবধানে তিন দফা ওমরা যাত্রীদের বিমান ভাড়া বাড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান। ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সামনে এ ভাড়া আরও বাড়ানো হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক এই বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে পড়েছে ওমরা সেবা প্রদানকারী এজেন্সিগুলো। যদিও বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে বিষয়টি বিবেচনার জন্য তাদের প্রস্তুতি আছে।

 

এদিকে, বর্ধিত ভাড়ার চাপের মধ্যেই ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামের ভাড়া বৈষম্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সৌদি আরবে বিমানের রুটে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামের যাত্রীদের কমপক্ষে ৬০ ডলার অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এমন অভিযোগে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের যাত্রীদের মধ্যে খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা কিংবা মদিনা রুটে বিমান বাংলাদেশের স্বাভাবিক ভাড়া পাঁচশ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ ডলার। কিন্তু সেটি গত ডিসেম্বরে ছয়শ’ থেকে সাড়ে ছয়শ’ ডলারে পৌঁছায়। এক মাসের ব্যবধানে চলতি মাসের শুরুতে এসে তা দাঁড়ায় ৭১০ ডলারে। এরমধ্যেই ২৫ জানুয়ারি থেকে আবারও ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। নতুন ভাড়া অনুযায়ী তা এখন ৯শ থেকে ১ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। মার্চে গিয়ে এ ভাড়া আরও বাড়বে, পূর্ব অভিজ্ঞতায় এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে একজন ওমরা যাত্রী আসা-যাওয়ার বিমান বাড়া ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিতে হলেও এখন তা এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। এমতাবস্থায় বিষয়টিতে নজর দেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

 

হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘হঠাৎ করে টিকিটের দাম বাড়ানো ওমরা যাত্রীদের প্রতি অমানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সামনে আরও বাড়বে। তারমধ্যেই ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামের ভাড়া ৬০ ডলার বেশি। অথচ অতীতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সব জায়গায় একই ভাড়ায় যেতে পারতো যাত্রীরা। নানা কারণ দেখিয়ে এভাবে ভাড়া বাড়ানো অযৌক্তিক। যদি এমন হয়, তাহলে যাত্রীদের প্রতি জুলুম হয়ে যাবে। অনুরোধ থাকবে, বিষয়টি বিবেচনা করুন।’

 

এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্স অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাফর পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই সময়ে ওমরা যেতে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে। যার কারণে বিমানগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে পাঁচটি বিমান যাত্রী নিয়ে গেলেও এবারে মাত্র তিনটি বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এরমধ্যে দুটি বিদেশি, একটি রাষ্ট্রীয় বিমান। তবে ভাড়ার ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশের দাম তুলনামূলক বেশি। ভাড়া যদি আরও বাড়ে, তাহলে যাত্রীদের উপর চাপ হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করা উচিত।’

 

এজেন্সিগুলোর নির্বাহীরা বলছেন, যাত্রীর চাপ থাকা সত্ত্বেও বিমান বাংলাদেশের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে অনেক ফ্লাইট খালি যাচ্ছে। অথচ বিপরীতে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে। এতে করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় বিমান হওয়ার পরও ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রাম-সিলেটে ভাড়ায় বৈষম্য করা হচ্ছে। যা কোনভাবেই উচিত নয়। অথচ বাংলাদেশ বিমানের চেয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা কম মূল্যে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে।

 

জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রতি বছরই ভাড়া কিছুটা ওঠানামা করে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এবারও সামান্য কিছু বেড়েছে। পরিস্থিতি বুঝে যদি পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলেও কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে আবারও বিবেচনা করা হবে।’

 

ঢাকা-চট্টগ্রামের ভাড়ার পার্থক্যের বিষয়ে বিমানের পরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বিমানটি খালি যায়। তারপর সেখান থেকে সৌদি আরবে যায়। ৪৫ মিনিটের এই অপারেশনের কারণে যে খরচ হয়, তা এখান থেকেই পোষাতে হয়। ভাড়া একটু বেশি হলেও যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে পারছেন। বিদেশি বিমানগুলোতে তারা অন্য রুটে যাচ্ছে, তাদের সাথে তুলনা করলে হবে না। ’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট