চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

৩ কারণে চড়া শীতের সবজির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ | ৫:৫৪ অপরাহ্ণ

হেমন্তে নতুন ধান ঘরে তোলার পর খালি জমিতে নানা রকম সবজি ফলান কৃষকরা। শীতের শুরু থেকে বাজারে আসতে থাকে এসব সবজি। পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকায় এ সময় সবজির দামও থাকে হাতের নাগালে। প্রকৃতিতে শীত আসায় এবারও বাজার সয়লাব নানা রকম সবজিতে। তবে চিরাচরিত ‘শীতে সবজির দাম কম’ রীতি অনেকটাই বদলে গেছে এবার। শীত শেষের দিকে হলেও খুচরা বাজারে এখনও ৬০ টাকার ঘরেই অধিকাংশ সবজি।

 

এর কারণ হিসেবে সবজির পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, হেমন্তে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক সবজির মাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে সবজির উৎপাদন এবার কম। স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত সবজিও বাজারে আসছে দেরিতে। এছাড়া পাইকারি বাজারে অধিকাংশ সবজি ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও পরিবহন ও সংরক্ষণ খরচ যোগ হয়ে খুচরা বাজারে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। এসব কারণে এবার সবজির দাম চড়া।

 

গতকাল নগরীতে পাইকারি সবজি বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার ‘রিয়াজুদ্দিন বাজার’ ঘুরে দেখা যায়- বাঁধাকপি, মুলা, ধনেপাতা, শসা, পেঁয়াজ পাতা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়। লাউ, ফুলকপি, কাঁচা মরিচ, শসা, পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।

 

সিম, টমেটো, বেগুন, চিচিঙ্গা ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। ব্রকলি ও লেটুস পাতা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকায়। দেশি আলু আকারভেদে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৭০ টাকা, ক্যাপসিকাম জাতভেদে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ৪৩০ টাকা এবং খোসাসহ সিমের বিচি ১১০ থেকে ১৪০ টাকা ও খোসা ছাড়া ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

 

বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজুদ্দিন বাজার সবজি আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রশীদ আহমেদ বলেন, শীতের আগে বৃষ্টি হয়েছিল এদিকে। এ বৃষ্টিতে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই উৎপাদন অনেক কম এবার। বাজারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি থাকলে দাম কম থাকে। এখন যেহেতু উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি, তাই দামও একটু বেশি।

 

নিউ দয়াল ভাণ্ডার আড়তের মালিক হারুনর রশীদ জানান, উৎপাদন তো স্বাভাবিকের চেয়ে কমই। তবে এবার বন্যাসহ নানা কারণে স্থানীয় কৃষকরা সবজি ফলিয়েছেন অনেকটা দেরিতে। তাই শীত প্রায় শেষের দিকে হলেও এখনও স্থানীয় কৃষকদের সবজি পুরোদমে বাজারে আসেনি। এখন আসছে ধীরে ধীরে।

 

স্থানীয় কৃষকদের সবজি বাজারে এলে দাম আরও কমতে পারে বলে দাবি রিয়াজুদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলীর। তিনি বলেন, এখন সরবরাহ কম। উত্তর চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের কৃষকদের সবজি মাত্র আসা শুরু হয়েছে। তাদের সবজি পুরোদমে আসলে দাম কিছুটা কমবে।

 

পরিবহন খরচের কারণেও খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়া বলে জানিয়েছেন চকবাজার কাঁচা বাজারের বিক্রেতা জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, রিয়াজুদ্দিন বাজারের গলি সরু হওয়ায় বড় গাড়ি ঢুকানো যায় না। তাই পণ্য শ্রমিক দিয়ে এনে মূল সড়কে রাখা গাড়িতে লোড করতে হয়। এর বাইরে পরিবহন আর সংরক্ষণ খরচও আছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি সবজিতে গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়তি খরচ হয়ে যায়।

 

এদিকে রোজার আগে দাম বাড়ছে মাছ-মাংসের। কিছু মাছের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে তেলাপিয়া, রুই, মৃগেল ও রুপচাঁদা মাছের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে তেলাপিয়া মাছ কেজিপ্রতি ২০০-২১০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশি।

 

রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে প্রতিকেজি ২৬০-৩৬০ টাকা। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ৪০-৬০ টাকা বেশি। মৃগেল মাছ প্রতিকেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০ টাকা। ছোট রুপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা দামে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে অন্তত ৫০ টাকা বেশি।

 

এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাতভেদে মুরগির দামও প্রতিকেজিতে বেড়েছে ১০-৫০ টাকা। বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫৫০ টাকায়, সোনালী মুরগি ২৮০-২৯০ টাকায় এবং ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৮৫-১৯৫ টাকায়। এরমধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বেড়েছে।

 

তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও ছাগলের মাংসের দাম। নগরীর বিভিন্ন বাজারে বৃহস্পতিবার হাড়বিহীন গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিপ্রতি এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট